প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
সাল ১৯৪১। সত্যজিৎ রায় তখন তরুণ তুর্কি। সবে কুড়িতে পা। শান্তিনিকেতনে কলাভবনের ছাত্র। খুব সম্ভবত স্টাডি ট্যুরে বেড়াতে গেছিলেন মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে। অজন্তা ও ইলোরার গুহাদর্শনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাষ্ট্রকূট রাজবংশীয় রাজাদের আমলে গড়ে ওঠা সেই শতাব্দী প্রাচীন অভাবনীয় পুরাকীর্তি দেখে ভয়ানক মুগ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ। নতুন করে চিন্তাভাবনার রসদ খুঁজে পেয়েছিলেন প্রাচীন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব, কলা ও স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে। ভারতীয় শিল্পকলা নিয়ে সেই মুগ্ধতা পরে ছড়িয়ে পড়েছিল তার লেখাতেও। কিন্তু শুধু মুগ্ধতায় থেমে থাকেননি সত্যজিৎ। পাশাপাশি উঠিয়ে এনে ছিলেন এইসব পুরাকীর্তি ঘিরে গড়ে ওঠা দুষ্প্রাপ্য ও বহুমূল্য মূর্তি চুরি, ভ্যান্ডালিজম, আন্তর্জাতিক র্যাকেট, শিক্ষিত অপরাধী, মানুষের লোভ লালসার ইতিহাস ও তার চেয়েও বেশি ভারতীয় ঐতিহ্যের গর্বের সম্পদ, প্রাচীন স্থাপত্যকলা নিয়ে দেশের একটি বড় অংশের দুর্ভাগ্যজনক উদাসীনতার কথাও।
এর প্রায় ৩২ বছর পর ১৯৭৩ সালে ফেলুদা সিরিজের অন্যতম ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ বইতে তার অজন্তা-ইলোরা ভ্রমণের তথ্য তুলে ধরেন সত্যজিৎ। একই সঙ্গে, সেই সময় গোয়েন্দা কাহিনীর মোড়কে, তুলে আনেন ভারতীয় স্থাপত্যকলা ধ্বংস ও চুরির কথাও। এই প্রাচীন সমস্যা যথেষ্টই নাড়া দিয়েছিল তাকে। প্রিয় চরিত্র ফেলুদার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিয়েছিলেন— সারা পৃথিবীতে হীরে জহরত মণিমুক্তো অনেক আছে, ভবিষ্যতে তা হয়তো আরও বাড়বে কিন্তু অজন্তা ইলোরা, খাজুরাহো বা ভুবনেশ্বরের রাজারানীর মন্দির একটি বই, দুটি নেই। এই সব স্থাপত্য-নজির ভারতীয় প্রাচীন কলা সংস্কৃতির বিস্ময়কর নিদর্শন। যারা এই সব মন্দিরের গা থেকে ভেঙে দেশের ঐতিহ্য চুরি করে বিদেশে মোটা দামে বেচে তারা ‘ক্রিমিনাল’। তাই তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার।
কৈলাস মন্দিরের গুহায় ‘ভিলেন’ চট্টরাজকে হারিয়ে রাধারানি মন্দিরের দূর্লভ সেই যক্ষীর মাথা ফেলুদা উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ভারতীয় মন্দিরের গা থেকে মূর্তি চুরির ইতিহাস কিন্তু থেমে থাকেনি। বরং আজও তা অব্যাহত। সম্প্রতি কিছু কেন্দ্রীয় নথিতে পাওয়া গেছে তেমনই ইঙ্গিত৷ বলাবাহুল্য, সেই সব ইঙ্গিত যথেষ্টই চিন্তার বিষয়, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা দরকার, পৌত্তলিকতা সমৃদ্ধ এই দেশে মূর্তি ভাঙা-গড়ার ইতিহাস আজকের নয়। গজনীর সুলতান মামুদ থেকে নাদির শাহের মতো বহির্বিশ্বের আক্রমণ যতবার ঘটেছে এই উপমহাদেশের বুকে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের প্রাচীন পুরাকীর্তিই। লুণ্ঠনের ‘কালো’ ঐতিহ্যে ঝাঁপিয়েছে ব্রিটিশরাও। হাতছাড়া হয়েছে ময়ূর সিংহাসন বা কোহিনূরের মতো মহামূল্যবান রত্নরাজি। ধ্বংস হয়েছে বহু মন্দির, দেবালয়, মূর্তি ও স্থাপত্যশৈলী। তবে বর্তমান সময়ে সেই ভাঙাগড়ার খেলায় দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণের ছোঁয়া যাতে ইদানীং প্রবলভাবে মেতে উঠেছে আসমুদ্রহিমাচল। সাম্প্রতিক কালে, মোদি জমানার শেষভাগে মূর্তি স্থাপন ও মূর্তি ভাঙা নিয়ে এক অদ্ভুত ধূম জেগেছে সারাদেশে। এর পিছনে সংকীর্ণ নাকি উদারবাদী রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে তা নানা বিশেষজ্ঞ তথা তাত্ত্বিকের আলোচ্য বিষয়, কিন্তু যে দেশের লোক এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোটাতে অক্ষম, যে দেশে সেই দেশে মূর্তি ভাঙা-গড়ার ঢক্কানিনাদ আর যাই হোক, শ্রুতিমধুর কখনওই নয়। তবু দিকে দিকে সেই মূর্তি ভাঙা ও গড়ে তোলারই একঘেয়ে, কর্কশ ধ্বনি। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আদর্শগত ভাবাবেগ আর তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন।
তাই কখনও নর্মদা নদীর তীরে ১৮২ মিটারের সুউচ্চ সর্দার পটেলের ‘ঐক্যের মূর্তি’র আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে ২৫ হাজারেরও বেশি স্থানীয় আদিবাসীদের ভূমিচ্যুত হওয়ার কান্না, কোথাও অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের আগেই শোনা যাচ্ছে আকাশচুম্বী রাম মূর্তি গড়ার আস্ফালন যাতে রীতিমতো তিতিবিরক্ত দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ও। অন্য দিকে আবার মূর্তি গড়ার ‘প্রতিযোগিতা’য় নেমে আকাশের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন মহারাষ্ট্র নায়ক ছত্রপতি শিবাজী, কোথাও বা গান্ধি হত্যাকারী নাথুরাম গডসের মূর্তি গড়া নিয়ে দেশব্যাপী আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার ‘নিভৃতে’ প্রচার। মূর্তি গড়ার ঐতিহ্য যখন রয়েইছে এই দেশে, ভাঙারই বা থাকবে না কেন! তাই হিন্দুত্ববাদী ঝড়ে বাম গড় ত্রিপুরার পতন হলে উপড়ে ফেলা হয় মহামতি লেনিনের স্ট্যাচু, তেমনই চলে দক্ষিণী জননায়ক ও কবি আয়াঙ্গারের মূর্তি ভাঙার ছক। কোথাও নিস্তব্ধে ভূলুন্ঠিত হন সংবিধান-প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকর, আবার কোথাও শহর কলকাতাতেই কালি পড়ে, ভাঙচুর হয় জনসংঘের দিকদ্রষ্টা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আবক্ষ মূর্তি। ব্যক্তিপূজার আড়ালে মূর্তি ভাঙা-গড়ার এই খেলায় যখন মত্ত একটা গোটা উপমহাদেশে গণমাধ্যম, রাজনীতি, সমাজ ও সমাজে বসবাসকারী গণতান্ত্রিকপন্থায় বিশ্বাস রাখা ১৩০ কোটি জনগণ, তখন নিঃশব্দে সূদুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন শতাধিক চুরি বা লুট হয়ে যাওয়া ভারতীয় সাহিত্য কলা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা দুর্লভ, দুর্মূল্য ও ঐতিহাসিক মূর্তি ফেরত নিয়ে আসার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। কালো টাকা, সুইস ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্কের খাতায় ১৫ লক্ষ, জীবিকা ও অর্থনৈতিক পালা বদলের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির চাইতে তার গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা কোনও অংশেই কম নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি।
বিতর্কের শুরু গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই মোদির দেয়া একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে। বিতর্ক ২০১৬ সালের মার্চ মাসের শেষার্ধে মার্কিন সফরে প্রবাসী ভারতীয় সমাজের উপস্থিতিতে বলা এক ‘অবিশ্বাস্য’ ও হাস্যকর দাবি নিয়ে। সেই বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোদি দাবি করেন, ভারতের সাথে সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখে আমেরিকার ট্রাম্প সরকার ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন ডিসি’র ব্লেয়ার হাউসের একটি অনুষ্ঠানে ভারত থেকে একদা লুণ্ঠিত ২০০টি বহুমূল্য শিল্পকলা (আর্টিফ্যাক্টস) ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইন্দো-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই সেই ঘোষণা চিহ্নিত। কিন্তু বলা বাহুল্য, এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মোদির মোদিসুলভ চোখধাঁধানো জাতীয়তাবাদী ‘ক্যারিশ্মা’য় চাপা পড়ে যায়। আমরা ভুলে গেলেও, সেই ‘উদ্ভট’ দাবি ভোলেননি অনেকেই। প্রশ্নও ওঠে খোদ সংসদে আর তার ‘উত্তর’ রূপে যা আসে, তাও কিন্তু এক বাক্যে বাধিয়ে রাখার মতন। উত্তরের আড়ালে বরং উঠে আসে গত চার বছরে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যকলা চুরি ও ধবংসের এক অস্বস্তিকর ইতিহাস।
সংসদীয় সূত্রে জানতে পারা যায় চলতি বছরের বর্ষাকালীন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সেই বিতর্কিত দাবি তুলে ধরে কেন্দ্রের কাছে লিখিত প্রশ্ন (লিখিত প্রশ্ন নম্বর ১৯১৬) জমা দেন কেরলের কংগ্রেসী সাংসদ, শিক্ষাবিদ শশী থারুর যার সদ্য প্রকাশিত ‘দ্য প্যারাডক্সিকাল প্রাইম মিনিস্টার’ গ্রন্থ ও তাতে প্রধানমন্ত্রীর নীতির বিষয়ে উদ্ধৃত ইংরাজি অভিধানের দাঁতভাঙা দীর্ঘতম শব্দটি যা একদা ‘শাখাপ্রশাখা’ সিনেমাটিতে উৎপল দত্তের মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়, অথচ যার বুদ্ধিদীপ্ত গুঁতোয় কুপোকাত গেরুয়া শিবির। থারুর প্রশ্ন তুলে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ২০০টি শিল্পকলা দেশে ফেরত আসা নিয়ে ওয়াকিবহাল কিনা মন্ত্রক ও তা এসে থাকলে তার মন্ত্রকের তরফে পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও ব্যাখা। প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খান কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. মহেশ শর্মা। ৩০ জুলাই তিনি জানান, এএসআই (Archelogical Survey of India) এই বিষয়ে অবগত নয়। তারা পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী নিয়ে আগ্রহী, শিল্পকলা তাদের বিবেচ্য বস্তু নয়। মহেশ শর্মা বলেন, ২০১৬’র জুন থেকে বর্তমান সময়ে আমেরিকা থেকে মোট ১৭টি বহু প্রাচীন শিল্পকলা দেশ ফেরত পেয়েছে। এর মধ্যে দুটি— সন্ত মাণিক্যবিচাবকর ও একটি গণেশ মূর্তি পর্যবেক্ষণের পর তামিলনাড়ু ও খাজুরাহে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫টি এএসআই’র রক্ষণাবেক্ষণে গচ্ছিত। বলাবাহুল্য, মন্ত্রক তার উত্তরে একবারের জন্যও মোদির ২০০টি মূর্তি ফেরত আনার দাবির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেনি। দেননি সেই ১৫টি ফেরত পাওয়া মূর্তির কোনও বিবরণ। এএসআই’র প্রসঙ্গ’টি অতিকথন রূপে উঠে আসে এই ক্ষেত্রে।
শশী-পরবর্তী মূর্তি বিষয়ক বিতর্ক উস্কে দেন রাজস্থানের বিজেপি সাংসদ মানশঙ্কর নিনামা। পেশায় কৃষিবিদ ও পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত মানশঙ্কর লোকসভায় লিখিত প্রশ্নে (প্রশ্ন নম্বর ১৯৫৭) জানতে চান সারাদেশ জুড়ে চলা প্রাচিন স্থাপত্যশৈলীর চোরাকারবারি নিয়ে। তিনি বলেন, এই বাড়বাড়ন্ত কারবারে এখনও পর্যন্ত রাশ টানতে পারেনি কেন্দ্র, যার ফলে মূর্তিচোরেরা বা এই ব্যবসায় জড়িত অবৈধ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ‘ওয়েবসাইট’ চালু করে চুরি হওয়া মূর্তি দেশে-বিদেশে নানান খদ্দের’দের কাছে চড়া দামে তুলে দিচ্ছে। এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চান নিনামা। উত্তরে, কেন্দ্র জানায় ২০১৪ থেকে ৩০ জুন, ২০১৮ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় মোড়া মন্দিরগাত্র থেকে ১৫টিরও বেশি বহুমূল্য, দুষ্প্রাপ্য মূর্তি চুরির কথা জানা গেছে৷ তবে সরকারি স্তরে ১৩টি মূর্তি চুরির কথা স্বীকার করেছে কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক বাজারে এই সব চোরাই মূর্তিগুলির দামই প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা করে। কেন্দ্র এও স্বীকার করে মাঝখানে এই মূর্তি চোরাচালানকারীদের একটি ওয়েবসাইটের কথা জানতে পারে কেন্দ্র যার নাম ‘www.saffronart.com‘। অতীতে এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে একটি শতাব্দী প্রাচীন জৈন মূর্তি বিক্রির কথা জানতে পারে আই বি। খবর যায় এএসআইতেও। এমনকি সিবিআই পর্যন্ত এর তদন্তে নামে কিন্তু কিছু করে উঠতে পারেনি। উল্লেখ্য, মোদি জমানায় গত চারবছরে চুরি হওয়া ঐতিহাসিক ও প্রাচীন শিল্পকলা সমৃদ্ধ মূর্তির যে তথ্য কেন্দ্র তুলে ধরে তা হল—
১. কর্নাটকের নীলগুণ্ডার ভীমেশ্বরী মন্দিরের গা থেকে চুরি হওয়া একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর য়ক্ষ।
২. ওড়িশার জাজপুরে দ্বাদশ শতাব্দীর বরাহনাথ মন্দির থেকে ত্রিবিক্রম মূর্তি।
৩. কর্নাটকের চিক্কাবল্লপুরের ভোগানন্দীস্বর মন্দিরের দ্বাদশ শতাব্দীর কালো পাথরের একটি কলস।
৪. মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে দৌলতাবাদ ফোর্ট থেকে ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীর ১১টি প্রাচীন শিল্পকলা।
৫. বিহারের রাজগীরের সুপ্রাচীন জৈন মন্দির থেকে ১১-১২শ শতাব্দীর স্থাপত্য।
৬. ওড়িশার চন্দ্রশেখর মন্দিরের দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাচীন ভৈরব গণেশ ও কুমারী মূর্তি।
৭. মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে কাসা ফোর্ট থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর একটি লৌহ কামান।
৮. রাজস্থানের উদয়পুর স্থিত কল্যাণপুরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে একাদশ শতাব্দীর তিনটি পাথরের শিল্পশৈলী।
৯. ছত্তিশগড় দান্তেওয়ারার ভৈরববাবা মন্দির ও জিয়াপাড়ার একটি প্রাচীন মন্দির থেকে দুটি পাথরের ভৈরব মূর্তি। মন্দিরগুলি কত পুরনো তার হিসেব পাওয়া যায়নি, তবে আনুমানিক ৮ম শতাব্দীর।
১০. কর্নাটকের কোলার জেলার রামলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে ১১-১২শ শতাব্দীর প্রাচীন পাথরের রুদ্র গণেশ (বিঘ্নেশ্বর) মূর্তি।
১১. অন্ধ্র প্রদেশের পূর্ব গোদাবরীর কুমারাম্মা ভীমেশ্বরা স্বামী মন্দিরের দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাচীন স্থাপত্য৷
১২. অন্ধ্রের বীরভদ্র মন্দিরে দশম শতাব্দীর বহু প্রাচীন নন্দী মূর্তি।*
১৩. অন্ধ্রের চিতুর জেলার পরশুরামেশ্বর মন্দির চত্বরে আনাদাভাল্লি আম্মাভারু মন্দিরের গাত্র থেকে ১১-১২ শতাব্দীর নন্দী মূর্তি ও স্থাপত্য।
দূর্ভাগ্যের বিষয়, এই বিপুল সংখ্যক প্রাচীন মূর্তি চুরির অধিকাংশের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ধরা পড়েনি কোন অভিজুক্ত। একমাত্র বীরভদ্র মন্দিরে* নন্দী মূর্তি কাকতালীয়ভাবে উদ্ধার করতে পেরেছিল সেই রাজ্যের পুলিশ। বাকি সমস্ত দুষ্প্রাপ্য ও এই মহা দুর্লভ মূর্তিগুলি হারিয়ে গেছে চিরতরে। আজও যার নাগাল পায়নি পুলিশ প্রশাসন, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার। হয়তো আন্তর্জাতিক চোরবাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়ে গেছে কোথাও। কোথাও বা হয়তো আরবদেশীয় শেখ বা ব্যবসায়ীর ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে তারা। সেই সব মূর্তি ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তাই সময় ভুলে গেছে তাদের। শুধু পড়ে রয়েছে ছেনি হাতুড়ির আঘাত, মূর্তি ব্যবসায়ীদের লালসা, জনগণের পাহাড়সম অজ্ঞতা ও উদাসীনতা যা প্রাচীন পাথরের গায়ে পানের পিক ফেলতে বা প্রেমিক-প্রেমিকার নাম লেখায় বেশি মত্ত এবং সর্বোপরি সরকারিস্তরে দুর্নীতি ও নীতিহীনতার পারিপাট্য। রাজ্যে রাজ্যে সুউচ্চ মূর্তি গড়াই যে দেশের একমাত্র রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ‘বিনোদন’ সেখানে হয়তো প্রাচীন মূর্তিদের সংরক্ষণ এবং তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ আশা করাই বাতুলতা।
তাই পাঠক বিশ্বাস করুন, ‘চট্টরাজে’-রা আজও আছে এই দেশে, বরং ফেলুদার মতন মানুষরাই আজ হারিয়ে গেছে কোথাও।