প্রতিভা সরকার
সারাজীবন সঙ্গীতকে আয়ত্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে গেছি। সুরের মায়ায় কত কাণ্ড যে করেছি, আর কোথায় কোথায় যে গেছি তার কোনও ইয়ত্তাই নেই। স্বাভাবিক, কারণ মহাজনেরাই বলে গেছেন সঙ্গীতের তুল্য বিদ্যা বিরল— ন বিদ্যা সঙ্গীতাৎ পরা।
যেমন বছর দশ পনেরো আগে খেয়াল হল ধ্রুপদ শিখব। হাজির হলাম যতীন দাস রোডে অলকা নন্দী দিদির বাড়ি। উনি ওস্তাদ নাসিরউদ্দিন খাঁ ডাগরের সাক্ষাৎ শিষ্যা। গান শুনে আদর করে শিষ্যত্বের অধিকার দিলেন। প্রথমদিনেই বুঝিয়ে দিলেন অহত্ এবং অনাহত্ সুরের পার্থক্য। সময়, সুযোগ আর দূরত্বের কারণে সে শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি, কিন্তু দিদির কাছে শোনা কয়েকটি গল্প মনে আছে খুব পরিষ্কার।
ওস্তাদ নাসিরউদ্দিন খাঁ ডাগরের এক পূর্বপুরুষ বীণ বাজাতে বসলে কদাচিৎ লাভ করতেন এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা। তখন পদ্মগন্ধে চারদিক বিভোর হয়ে উঠত এবং তাঁর নিজের দক্ষিণ হস্তটি থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকত এক দৈব আভা। ত্বকের রং হয়ে উঠত গোলাপি, অঙ্গুলি হয়ে যেত দীর্ঘ, শিল্পীসুলভ। আসলে সেই কমনীয় অপূর্ব হাতের মালকিন তখন স্বয়ং দেবী সরস্বতী। দেবীর ভর নেমে আসত সঙ্গীতজ্ঞ শিষ্যের দক্ষিণ হস্তে। অপূর্ব বীণাঝংকারে মুখরিত হত চারদিক, কোনও নশ্বর মানুষের সাধ্য নেই সেই অলৌকিক সুরসৃষ্টির। যে সমস্ত দিনে এমন হত, সেদিন বাজনা শেষ করেই ওস্তাদ ভেঙে ফেলতেন তার বীণখানি। যা ধন্য হয়েছে দেবী সরস্বতীর আপন স্পর্শে, তাতে যেন না লাগে পাপপুণ্যে গড়া কোনও মানুষের ছোঁয়া!
দিদি নানা গল্প করতেন আর আমার মানসিক সেতু তৈরি হত ডাগর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে। আমার মতো তুচ্ছ মানুষের সঙ্গে ধ্রুপদের মহান পরম্পরার এই দুর্বল সংযুক্তিতেও মনে হত ডাগররা আমারও পূর্বজ— এই সুরের অঞ্জলিতেই ছুঁতে পারছি ওদের পদতল। আর আমার মাথায় ঝরে পড়ছে অতুল আশীর্বাদ!
তখন থেকেই আমার বিশ্বাস সঙ্গীতে অলৌকিকতা আছে, শ্রুত অশ্রুত সুর আছে, পরম্পরা আছে, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা মোটেই নেই। এই যে উত্তর ভারতজোড়া যত মহান ধ্রুপদী সঙ্গীতজ্ঞ, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ জনই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। অথচ ইসলামে সঙ্গীতচর্চা কমবেশি নিষিদ্ধ! মাইহারের দেবতা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, তার বিশ্বজয়ী পুত্র এবং শিষ্য, গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ হুদ্দু খাঁ, ওস্তাদ ফৈয়জ খাঁ, জয়পুর ঘরানার ওস্তাদ আল্লাদিয়া খাঁ, কেশরবাই, মনজি খাঁ— কত আর নাম করব। সানন্দে মুসলমান গুরুর কাছে নাড়া বেঁধেছেন পণ্ডিত ভাস্কর বুয়া, পণ্ডিত দিলীপচন্দ্র বেদী, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ, মল্লিকার্জুন, বালগন্ধর্ব, পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার ব্রাহ্মণবংশজাত। শিষ্যদের যেমন ‘করিম রহিম’ গাইতে কোনও দ্বিধা ছিল না, মুসলমান ওস্তাদরাও তেমনি দেবদেবী স্তুতিতে খেয়াল ধ্রুপদ গেয়ে আসর মাতিয়ে দিতেন। বন্দিশ রচনা করে নাম লিখতেন ‘দীন রামদাস’ আর আলাপের সময় খুব সাধারণ সর্বজনগ্রাহ্য শুরুয়াত ছিল ‘হরি ওঁম অনন্ত নারায়ণ!’
হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ভারতীয় ওস্তাদ গাইয়েরা এই পরম্পরা ধরে রেখেছিলেন এই সেদিনও। গতবছর দিল্লিতে ঠুমরি মেহফিল ছিল তিন দিন ধরে। সেখানে তানসেনের বংশধর গোলাম সাদিক খানের মতো দিকপাল পুত্রপ্রপৌত্রসহ রাগ খাম্বাজে বন্দিশ ধরেন, ‘শ্যামসুন্দর বনোয়ারি।’ মান্ডি হাউজের নিস্তব্ধ কামানি অডিটোরিয়ামকে তখন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল কানহাইয়া লালের শিশুসুলভ সৌন্দর্য্য, বনচর স্বভাবের সারল্য! কী অবলীলায় একই ঠুমরিতে ওস্তাদজি পাশাপাশি উচ্চারণ করেন ‘খুদা’ ও ‘ভগবান’ কথাদুটি!
‘এ কানহাইয়া, ইয়াদ হ্যায় কুছ ভি হমারি?’— অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানে কাওয়ালিতে সমবেত হাহাকার ছড়িয়ে দেন ফরিদ আয়াজ ও আবু মোহাম্মেদ। ইষ্টের প্রতি বিস্মিত ভক্তের অভিমান রেণু রেণু ঝরে পড়ে তাদের সুরে ও বাণীতে— ‘পুরোহিতকে শতবার জিজ্ঞাসা করেও তোমার কোনও খবর পাই না কানহাইয়া, তুমি কি ভুলে গেলে আমাকে!’ ইষ্টের খবর আর যেই রাখুক মোল্লা অথবা পুরোহিত রাখবে না— এই বিশ্বাস থাকলে তবেই না ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে এই গান গাওয়া যায়।
কিন্তু কর্নাটকি সঙ্গীতজ্ঞ টিএম কৃষ্ণের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক উপায়ে। তাঁর অপরাধ ছিল এই যে ওস্তাদ সাদিক খানের মতো একই পংক্তিতে তিনি মুসলমানের আল্লা ও খৃস্টানের গডের স্তুতি গেয়েছিলেন। এই অপরাধে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে এই প্রথম সারির সঙ্গীতজ্ঞের সমস্ত প্রোগ্রাম উদ্যোক্তাদের বাতিল করে দিতে বাধ্য করে নব্যহিন্দুত্ববাদীরা। এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যখন টিএম কৃষ্ণের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়, তখন সেটি হয়ে দাঁড়ায় উটের পিঠে শেষ বোঝাটুকুর মতো। এইবার গর্জে ওঠে সাধারণ মানুষ, এবং দিল্লির আপ সরকারের সহযোগিতায় শেষ অবধি গাইতে সক্ষম হন এই কর্নাটকি ওস্তাদ।
কেন এতদূর অবধি জল গড়াল! কবে থেকে পরিষ্কারভাবে শুরু এই সাঙ্গীতিক দ্বিজাতিতত্ত্বের? এই প্রবণতা তো আগে দেখা যায়নি। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সেই কবেই লিখে গেছেন পণ্ডিত ভাস্কররাও বুয়ার কথা। অমৃতসর ও জলন্ধরে মুসলমান শ্রোতাদের অনুরোধে উনি গাইতেন ‘হজরত খ্বাজা সঙ্গ খেলিয়ো হমার।’ যখন গান শেষ হত আপ্লুত শ্রোতাদের ছোড়া ফুলে স্তুপ হয়ে যেত পণ্ডিতজির পায়ের ওপর। আবার হিন্দু ভক্তদের অনুরোধে তাঁকে একই অনুষ্ঠানে গাইতে হত ‘গোপাল মেরি করুণা’। প্রথম গানে বিহ্বল শ্রোতারা পণ্ডিতজির হাঁটু ছুঁয়ে কদমবুসি করলে, দ্বিতীয় গানের শেষে তাঁর সামনে ঢের লেগে যেত সাষ্টাঙ্গ প্রণামের। মুসলমানরা তাঁকে ভাবত পীর, হিন্দুরা সাক্ষাৎ সরস্বতীর সন্তান।
এই সম্প্রীতিতে ক্ষয়ের কোনও চোরাস্রোত ধাক্কা দিচ্ছিল কিনা জানা নেই, কিন্তু প্রথম খুল্লমখুল্লা আক্রমণ হয়েছিল গুজরাতে, ২০০২ সালের নরমেধ যজ্ঞের সময়। হিন্দুস্তানের সঙ্গীতসম্রাট, বহুদিন আগে বিগত ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর সমাধির ওপর উন্মত্ত আক্রমণ চালিয়েছিল ধর্মান্ধ শয়তানেরা। তাদের শাবল গাঁইতির আঘাতে উড়ে যায় শ্বেত পাথরের ছত্রী, ফেটে যায় সমাধির মার্বেল পাথর। সেই বোধহয় শেষের শুরু। এই প্রবণতা এখন চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছেছে টিএম কৃষ্ণর লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে।
একটু বিশদে বলা যাক। ঠিক হয়েছিল ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজেতা, প্রখ্যাত কর্নাটকি গায়ক, লেখক এবং সমাজকর্মী টিএম কৃষ্ণ দিল্লিতে গত সতেরোই এবং আঠারোই নভেম্বর এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (AAI) আমন্ত্রণে একটি কনসার্ট করবেন। এর কিছুদিন আগে থেকেই সোস্যাল মিডিয়াতে কৃষ্ণ এবং তাঁর সহসঙ্গীতজ্ঞরা দক্ষিণপন্থী শিবির থেকে লাগাতার ভয়ঙ্কর ট্রোলের শিকার হন। তামিলনাড়ুর এক কট্টর দক্ষিণপন্থী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সেবা সংঘম টিএম কৃষ্ণ, ওএস অরুণ এবং নিথ্যশ্রী মহাদেবনকে নাগাড়ে আক্রমণ করে যাচ্ছিল, কারণ তাঁরা নাকি প্রায়ই ‘অন্য ধর্মের ঈশ্বরদের’ নিয়ে গান গেয়ে থাকেন। এরই প্রতিবাদে কৃষ্ণ ঠিক করেন প্রত্যেক মাসে তিনি যীশু এবং আল্লার প্রতি নিবেদিত কর্নাটকি কম্পোজিশন একটি করে গাইতে থাকবেন। কৃষ্ণ বলেন, যারা আরবান নকশাল, প্রেস্টিটিউট এবং দেশদ্রোহী কথাগুলি মুড়িমুড়কির মতো ব্যবহার করে তারা গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জানে না। তারা ভয় দেখাতে চায়, অকারণে অন্যদেরও ক্রোধী করে তুলতে চায়। শুধুমাত্র এই দুই কারণের জন্যই তারা একটি মধুর সঙ্গীতোৎসবকে পণ্ড করে দিতে ইতস্তত করে না। তিনি আরও বলেন এই ট্রোল বাহিনীর সঙ্গে দেশের ক্ষমতাবানদের প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রয়েছে।
টিএম কৃষ্ণের আরও অপরাধ, শবরীমালা মন্দিরের দ্বার সবার জন্য খুলে দেওয়াকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করা। দেবতার অঙ্গনে ছুৎমার্গের প্রতিবাদে বিখ্যাত কন্নড় খেয়াল ‘বারো কৃষ্ণাইয়া’ গেয়ে মাত করে দেন শ্রোতাদের। এ গানে ঈশ্বরকে দেখা হয়েছে ঘরের ছেলের মতো, আহবান জানানো হয়েছে ভক্তের ঘরে আতিথ্য গ্রহণ করবার— তোমার তুল্য এ বিশ্বভুবনে আর কে কৃষ্ণ! তোমার রাতুল পাদুটিতে পরানো নূপুরের ‘ঢিমি ঢিমি’ শিঞ্জন মোহিত করছে চরাচর আর রক্তিম মুঠো গলে যাওয়া বালার কিঙ্কিণীতে মোহিত হয়ে রয়েছে চারিদিক। হে বংশীধারী, এসো এই দীন ভক্তকে সব অবিচার থেকে রক্ষা করো!
জনশ্রুতি, এই বিখ্যাত গানটির রচয়িতা একজন কুলমানহীন দরিদ্র দলিত সঙ্গীতজ্ঞ যাদের মন্দিরপ্রবেশ একদা মহাপাপ বলে বিবেচিত হত। তাই বাধ্য হয়ে ঈশ্বরকে পর্ণকুটিরে এই নিমন্ত্রণ।
এইবার ব্যাপারটা দক্ষিণপন্থীদের সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেল। বিজেপি মুখপাত্র বিবেক রেড্ডি ঘোষণা করেন কৃষ্ণ একজন বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ হলেও, কর্নাটকি স্টাইলে তিনি প্রভু যীশু এবং আল্লার বন্দনাগান গেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। এই বাধা গতের আড়ালে যে গোপন কথাটি লুকিয়ে রয়েছে সে তো আর গোপন নেই। সেকথাটি হল এই যে কৃষ্ণ মোদি শাসনের কট্টর সমালোচক। চিরকাল তিনি আধিপত্যকামী, জাত্যাভিমানী যে কোন অহঙ্কারের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, অভিজাত গণ্ডিতে আবদ্ধ কর্নাটকি সঙ্গীতকে আপ্রাণ চেষ্টায় সাধারণের কাছে নিয়ে গেছেন।
যাই হোক কোনও অদৃশ্য চাপে দিল্লিতে টিএম কৃষ্ণের কনসার্ট বাতিল হয়ে যায়। শুধু দিল্লিতেই নয় ওয়াশিংটন ডিসির শ্রীবিষ্ণু মন্দিরে, যেখানে আগেও কৃষ্ণ একাধিকবার কনসার্ট করে এসেছেন, সেখানেও একই ঘটনা ঘটে। এরপর মহীশূরের কনসার্টও বাতিল হয়ে যায়। আন্দাজ করা কঠিন নয় যে সর্বত্র আয়োজকদের ভয় দেখিয়ে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শ্রীবিষ্ণু মন্দিরের অনুষ্ঠান বাতিল সম্পর্কে কৃষ্ণ একটি মজার মন্তব্য করেন— যারা খ্রিস্টান দেশে এই বিশাল মন্দির বানিয়েছে, তাদের এখন ধর্মানুভূতি আহত করার অজুহাত ব্যবহার করা মানায় না। এরপর তিনি খোলাখুলি ঘোষণা করেন যে দিল্লিতে যে কোনও জায়গায় একটি মঞ্চ পেলেই তিনি সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। সুখের কথা, দিল্লির আপ সরকার এগিয়ে আসে এবং চূড়ান্ত শীতের রাতে বহু সাধারণ নাগরিক ভীড় করে টিএম কৃষ্ণের অমৃতকণ্ঠের পরিবেশনা শোনেন।
কর্নাটকি সঙ্গীত পদ্ধতি যে বিশুদ্ধ হিন্দু পদ্ধতি এবং সেই বিশুদ্ধতা রক্ষা করা হিন্দুদের অবশ্য কর্তব্য— এই ধরনের চিন্তাধারণা কখনও কী ভারতীয় সঙ্গীত মহলে বিরাজ করেছে? তাহলে এই লেখার শুরুতে যেসব মহান সঙ্গীতজ্ঞের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা কী করে বিধর্মী ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন? শুধু কর্নাটকিই কেন, যে কোনও ধরনের সঙ্গীত ধারারই পুনরালোচিত এবং পুনর্ব্যাখ্যাত হবার অধিকারকে এইভাবে রুখে দিয়ে তথাকথিত ধর্মীয় ট্র্যাডিশনের অচলায়তনে তাকে যদি বন্দি করে রাখা হয়, তাহলে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য তার অন্তরাত্মার বিবর্তন। সে আর জীবন্ত থাকবে না, হারিয়ে ফেলবে ভিন্ন মানসিকতার এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মানুষের সঙ্গে তার যোগসূত্র। অথচ ভারতীয় সঙ্গীত চিরকালই সমস্ত-সীমা-লঙ্ঘন-করা শক্তির জন্যই আদৃত হয়ে এসেছে। ধর্ম প্রাচীরকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের রচিত সঙ্গীত কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন, ‘অন্য ধর্মের ঈশ্বরের’ স্তুতিগানে মুখর হয়েছেন। এইভাবে বহুত্ব এসে মিলেছে একে, অথবা উল্টোটা এবং বহুত্ববাদ এবং সহিষ্ণুতায় আমাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর হয়েছে। এই অর্বাচীনদের বুঝিয়ে দেওয়া দরকার সঙ্গীত কখনও একটি ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। কোনও প্রতিষ্ঠিত ধর্মের পাঁচিলের ভিতর একে আটকে রাখা যায় না। সঙ্গীতের না আছে জাত, না আছে ধর্ম। তার ওপর অধিকার বিশ্বমানবের। এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দেবার কাজে টিএম কৃষ্ণ এখন আপামর ভারতবাসীর আদর্শ। আমরা যেন তাঁর কণ্ঠের রুদ্রবীণার সুরের অনুসারী হতে পারি।
পুনশ্চ— সঙ্গীত কীভাবে উপড়ে ফেলে দেশকালমানুষে ভেদাভেদের সমস্ত ধারণা তার একটি টাটকা উদাহরণ দিয়ে যাই। দেশপ্রেম কি তা বোঝানোর জন্য কৃষ্ণের গাওয়া দ্বিজেন্দ্রগীতি ‘ধনধান্যপুষ্প ভরা’ শুনে উৎসাহিত এক মালয়ালি যুবক গেয়ে ফেলে এই দেশাত্মবোধক গান। শ্রুথিন লাল নামে সেই গায়ক-সাংবাদিকের গানটিও রইল। সে আমার সন্তানসম আর সঙ্গীত নিয়ে আমার একদা পাগলামো এবং অদ্যাপি বয়ে চলা ঘোরের উত্তরাধিকার বহন করছে।
ফেসবুকে কপি+পেস্ট করলাম লিঙ্ক সহ ৷ হিটলারের জার্মানির মেঘ আমাদের দেশেও ঘনিয়ে আসছে ৷ এ লেখা সবাইয়েরই পড়া দরকার ৷
অনেক ধন্যবাদ।