চারের ঠেক
সবেদা– একটা পোশ্ন! রমজান শেষ হয়ে এল। ঈদ সাজিয়ে সেজে উঠেছে নিউমার্কেটসহ শহরের ছোট বড় বাজার। আসতে যেতে দেখি।
বিস্কিট– পোশ্নটা কি?
সবেদা– হ্যাঁ, মানে বলছিলাম ঈদ আসন্ন বলে সেজে উঠছে শহর। অথচ আমি ও আমার মতো অন্য ধর্মের মানুষের কোনও হেলদোল নেই। কেন থাকবে? এটা তো আমাদের ব্যাপার নয়। বেশ। অথচ ক্রিসমাস এলেই ফেসবুক পোস্টে কেকের পসরা, আদেখলাপনা। ক্রিসমাস আমাদের দেশে যতটা ভেতরে ঢুকল ঈদ ঢুকতে পারল না কেন? কলোনিয়াল হ্যাংওভার? সাহেবদের সংস্কৃতির প্রতি আমরা বেশি এক্সপোজড? নাকি ঈদের সাথে বিফের মতো একটা ট্যাবু জড়িয়ে আছে বলে? নাকি, আমরা চারপাশে যেসব মুসলিম দেখি তাদের বেশিরভাগেরই সেই জেল্লাটা নেই বলে?
বিস্কিট– আমার খানিকটা তাই মনে হয়, সাথে ঈদের নেচারটা অন্তর্মুখী বলেও কিছুটা, ক্রিসমাসের নেচারটা উৎসব হিসেবে বহির্মুখী। বিফটা কিন্তু খ্রীস্টানরাও একই ভাবে খায়। কিন্তু আইডেন্টিফাই করা হয় মুসলিমদের। বাই দা ওয়ে, এই ঈদে বিফ নেই কিন্তু। মানে থাকলেও সেটা এই ঈদের ফোকাস নয়, এইটা কুরবানির ঈদ নয়। ওটা আসবে পুজোর পর।
সবেদা– বেশ, বিস্কিট! আর?
বিস্কিট– এলিটিজম। ক্রিসমাস যে এলাকায় হয় কোলকাতার সাপেক্ষে ভাবলে সেটা পশ এরিয়া, পশ লোকজন, সাধারণের তার প্রতি আকর্ষণটা বেশী।
ভুঁড়ি– ফস্যা লোকের ধম্মের একটা দাম দিবি না?
সবজান্তা– একদমই কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আফটার অল, প্রভুর ধর্ম।
সবেদা– আমাদের ছোটবেলায় বড়দিনের সাথে একটা লম্বা ছুটি থাকত। কমলালেবু। পিকনিক। মেলা। মিঠে রোদ। ছুটি। একটা খুশির মরসুম। সেটাও একটা ফ্যাক্টর বোধহয়।
সবজান্তা– আরে ছুটি দেওয়া হত, তাই থাকত। দেওয়া কেন হত?
সবেদা– ঠিক, বিস্কিট। অবচেতনে এলিট হয়ে ওঠার একটা ঝোঁক। আর সবজান্তা, হ্যাঁ, এটা ঠিকই তো!
সবজান্তা– কলকাতায় অ্যাংলোদের গড়পড়তা আর্থিক অবস্থা কিরকম?
সবেদা– খুব ভালো বলে মনে হয় না।
বিস্কিট– একেবারেই সুবিধের নয়। কিন্তু দেখনদারিত্বে একটা ব্যাপার থাকে।
সবেদা– সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদও একটা বড় ব্যাপার। এখনি জিজ্ঞেস করলে গড়গড় করে বেশ কয়েকটা ক্রিসমাস মুভির নাম বলে দিতে পারব। হ্যালোয়েনও বেশ প্রচার পাচ্ছে। থ্যাংক্সগিভিং-এ টারকি খেতে হয়। মুসলিম সংস্কৃতির সম্বন্ধে এত বিস্তারিত কিছু জানি না। মুসলিমরা কিছুটা আইসোলেট করে রেখেছে নিজেদের। মিশনারী সংগঠনের মতো এখানে ওখানে বিনাপয়সায় বাইবেল, যিশুর কমিক্স বিতরণ, এই স্ট্রাকচারটা নেই ইসলামের। তার ওপরে বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তর অংশের একটা নাক সিঁটকানো তো আছেই। দেশভাগ খুনোখুনির স্মৃতিটাও কাজ করে নিশ্চয়ই।
জয়েন্ট– গুডমন্নিং। বিফ টিফ নিয়ে কথা হচ্ছে দেখছি। এইমাত্র চিলি চীজ মাশরুম ওমলেট, বেকন, সসেজ, বাটার টোস্ট আর অরেঞ্জ জ্যুস দিয়ে চরম ব্রেকফাস্ট হল।
সবেদা– বাহ! তোমাকেই খুঁজছিলাম, জয়েন্ট। ডঃ মণি ভৌমিকের কাজকম্মকে কিভাবে দেখ? মানে ওর কোড নেম গড ইত্যাদি ফান্ডাকে?
জয়েন্ট– দেখি না, ব্যক্তিগত মতামত বা প্রমাণ-অযোগ্য হাইপোথেসিস। তাই গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। তাছাড়া উনি এমন কিছু বিরাট বৈজ্ঞানিকও নন।
সবেদা– একমত। বিজ্ঞানের সাথে বেদ আর হিন্দু ধর্মকে মিলিয়ে দেবার ঝোঁকটাকে বরাবর সন্দেহের চোখে দেখি। কিছুদিন আগে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে ওর বক্তৃতা ছিল।
জয়েন্ট– গেছিলে?
সবেদা– না যাইনি। এক বন্ধু গেছিল। সে একেবারে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একটা সাংঘাতিক দক্ষিণপন্থী ঝোঁক। যুক্তি দিয়ে কাউন্টার করা দরকার।
জয়েন্ট– সেই একই ফান্ডা, বেদের নানান শ্লোকের ব্যখ্যা যেহেতু সাবজেকটিভ, তাই আধুনিক বিজ্ঞান যা প্রমাণনির্ভর, তার দ্বারা আবিষ্কৃত যেকোনও জিনিসই সেখানে আছে বলে দেখিয়ে দেওয়া যায়। জাকির নায়েকও এটাই করে কোরান থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে। দেখি, একটা লেখা লেখার চেষ্টা করব কাউন্টার করে।
সবেদা– করো তো!
ভুঁড়ি– আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রের কয়েকটা বিষয় আমাকে খুব ইন্ট্রিগ করে।
জয়েন্ট– আমাকেও, বিশেষ করে নাসাদীয় সুক্ত, নিজের বক্তব্যের ওপর সংশয় আর কোথাও দেখিনি।
সবেদা– কি রকম একটু শুনি, ভুঁড়ি?
ভুঁড়ি— এক, বিজ্ঞান (সে-যুগের মতন করে) শিল্পচেতনা নির্ভর আধ্যাত্মিকতা। বেদ বা উপনিষদ পড়ে আমার কখনই প্রচলিত অর্থে ঠাকুর-দেবতার আরাধনা বলে মনে হয় না। দুই, সেল্ফ নিগেশান।
সবেদা– ভারতীয় হিন্দু দর্শনের (হিন্দু শব্দটা এখানে ব্রাহ্মণ্যবাদে সীমাবদ্ধ নয়) অনেক স্কুল অফ থটসকে ধারণ করার ব্যাপারটা আমাকে খুব টানে। আমি ধম্মোকম্মো ঈশ্বর আচার কিছু না মেনেও হিন্দু। কারণ চার্বাকে নাস্তিক্য ও সংশয়েরও স্থান আছে।
ভুঁড়ি– তবে সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক হলেও সেই বিজ্ঞানটা অভ্রান্ত ছিল এটা মনে করাটা বলদামো ছাড়া কিছু নয়।
সবজান্তা– এটা কি শুধু হিন্দু পুঁথিপত্রেই আছে?
ভুঁড়ি– তা নয় সবজান্তা। আরবেও ছিল। তবে সে সম্বন্ধে প্রায় জানি না কিছুই। আর কোথাও নেই সেটা কোথায় বলেছি? সালা বিজেপি কোথাকার!
সবেদা– একটা কথা আমার মনে হয়, হিন্দু ধর্মের এই এত শিবিরভাগ এত সেক্টর এত স্কুল এটাই আর এস এস মার্কা একপেশে হিন্দুত্বকে জিততে দেবে না। মূল লড়াইটা বিজ্ঞান আলোকিত সেকুলাররা দিতে পারবে না, দেবে হিন্দুধর্মের স্ট্রাকচারটাই।
সবজান্তা– আমার মনে হয় সেই সময়ের বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ চর্চা সবটাই ধর্মগুরু (সোকলড)-রাই করতেন। ফলে, সমস্ত পুঁথিপত্রেই এই ব্যাপারটা পাওয়া যেতে পারে।
ভুঁড়ি– ক্রিশ্চিয়ানিটি বা ইসলামের মধ্যে এই আত্মজিজ্ঞাসা কোথায়? তাদের উদ্দেশ্যটাই তো আলাদা! বরং আফ্রিকার বুশম্যানের মধ্যে আছে।
সবেদা– ইবনে সিনা প্রভৃতি আরও অনেকে ইসলামে এই গণতান্ত্রিকতা আনতে চেয়েছেন। প্রাণ দিয়েছেন। এখন ওয়াহাবি স্কুল ইসলামের পতাকা ঘাড়ে তুলে নিয়েছে বলে ইসলামের নরমপন্থী ইনক্লুসিভ মতগুলো আড়ালে চলে গেছে।
ভুঁড়ি– আড়ালে চলে গেছে, একথাই বা কী করে বলছিস সবেদা? সব কট্টরপন্থী হলে আমরা বাঁচতাম?
সবেদা– ভুঁড়ি, তুমি ভালো বলতে পারবে। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের চাপে হাঁসফাঁস করতে করতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ সহজিয়া পথে চলে গেল। বাউল ফকিরদের নিজেদের মধ্যে কিন্তু কোন রেষারেষি নেই। গ্রামেগঞ্জে হিন্দু মুসলিমরা এখনও ধরে ধরে বাউল ফকিরদের মারে। তুমি লোকগান নিয়ে কাজ করছিলে না? ওটা কমপ্লিট কোর। খুব ভালো কাজ হবে।
জয়েন্ট– মূল সমস্যাটা সে যুগের জ্ঞানচর্চায় নয়, সমস্যাটা সে যুগের জ্ঞানচর্চাই একমাত্র সঠিক এটা দেখানোর জন্য আধুনিক বিজ্ঞানের জারগন (হ্যাঁ, শুধুই জারগন) ব্যবহার করায়।
ভুঁড়ি– একদম!
সবজান্তা– ব্যাপারটা হচ্ছে, ক্ষমতার স্বার্থে শাসকশ্রেণীর ধর্মকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করা। এ-ও যুগেযুগেই হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন যুগে একেক রাজত্ব মূলত এক ধর্মের লোকদের শাসন করত বলে ভেদাভেদটা আনতে হয়নি। ফলে সেসময় আমরা যা কিছু প্রগতিশীল পাই, ধর্মের মোড়কেই পাই। সে শাস্ত্র হোক, বা কোনও ধর্মীয় মুভমেন্ট। পরবর্তীতে সেটা আর সম্ভব হয়নি। ফলে ধর্ম তার প্রগতিশীলতা হারিয়েছে। শাসকরা তুমুলভাবে বিভেদের বীজ বুনেছে। যারা শোষিত, তাদের একটা বড় অংশও প্রতিরোধের রাস্তা হিসেবে ধর্মের সংকীর্ণতাকে আশ্রয় করেছে। আমার মনে হয়, মূল বিষয়টা এটাই।
সবেদা– সুন্দর বললে!
জয়েন্ট– একদম।
ভুঁড়ি– আমার কথাটা স্পষ্ট করছি আরেকটু। যতটা পারছি। বেসিক্যালি সবজান্তার কথার পিঠে এই কটা কথা–
ক্ষমতার স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার-– এটা খুবই সত্যি কথা। কিন্তু তথাকথিত হিন্দুধর্মের একটা সুবিধে হল-– এটা কিছু বেসিক টেনেটস মেনে চলা ধর্মগুলোর মতন নয়। মানে, এর বহির্প্রাতিষ্ঠানিক রূপটা এতটাই জোরালো, এত এর শাখাপ্রশাখার বিস্তার, যে এর পুরোটাকেই ব্যবহার করে ফেলা একটা জটিল ব্যাপার।
আমাদের দেশের রাজারাজড়ারা কেউ ব্রাহ্মণ্যবাদ, কেউ বৌদ্ধধর্ম, কেউ ইসলাম, কেউ দীন-ই-ইলাহী এইসব প্রচার করেছেন এবং শাসনকাজে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে-– এই ধার্মিকতার ব্যবহার যেভাবে পাশ্চাত্যে হয়েছে, ঠিক সেইভাবে আমাদের দেশে হয়নি। কারণ আমাদের দেশে কোনওকালেই চার্চের মতন ক্ষমতাসম্পন্ন কোনও প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠতে পারেনি। রাজার মাথাব্যথা তাই নিজেকে নিয়েই থেকেছে। তার প্রয়োজনে তখনকার রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজনীতির উপাদান হিসেবে ধর্ম যতটা আসার ততটাই এসেছে। মার্ক্সের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে এখানেই আমাদের বিযুক্তি ঘটে। তাই না?
অনেক দেশের মতন আমাদের দেশেও অনেক প্রগতিশীল কাজ ধর্মের মোড়কেই হয়েছে। গোটা ভক্তি আন্দোলনটাই তো তাই। কিন্তু তারও আগে, মানে একেবারে বেদ-উপনিষদের যুগে ফেরত যাওয়া যায় যদি, তবে দেখা যাবে সেখানে জ্ঞানচর্চা কিন্তু কোনও ধর্মীয় আইডিয়াকে প্রপাগেট করার জন্য হচ্ছে না। তাই-ই যদি হত-– তবে ‘আগুন জ্ঞানী মানুষের মনের মধ্যে থাকে’— এ জাতীয় কথা উপনিষদের বলবার দরকার পড়ত কী? অর্থাৎ, জ্ঞানচর্চা হচ্ছে অজানাকে জানার জন্য-– ঈশ্বরপ্রাপ্তির ইচ্ছা যার একটা অংশ। না কী একটা নাম?
এখানেই আমার পুরোনো কথা-– আমাকে যেটা ইন্ট্রিগ করেছিল-– সেটা সম্ভবত বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার একটা পরিমণ্ডল। তাতে বিজ্ঞান ছিল, শিল্প ছিল, দর্শন ছিল, ঈশ্বরও। তার গতিবিধি অভ্রান্ত ছিল-– এরকম আমি বলি না। সেটা বোকামো। কিন্তু তার একটা বেসিস ছিল। উদ্দেশ্যও ছিল। সেই উদ্দেশ্যকে আমি সৎ আর ইউনিক (আমার জ্ঞানের পরিধির মধ্যে) বলে মনে করি। এই জ্ঞানচর্চার অভ্যেস আর কোনও ধর্ম তৈরী করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।
ফুল– কি নিয়ে কথা হচ্ছে? আমিও কিছু বলি…
গুপ্ত– গায়ত্রী মন্ত্রটাই নেওয়া যাক। প্রার্থনামন্ত্রটুকু লক্ষণীয়। ধীয়োয়োন প্রচোদয়াৎ। আমার ধী-শক্তিকে উজ্জীবিত করো। এর থেকে বেশি সেকুলার প্রার্থনা আর কী হতে পারে? ভুঁড়ির সামিং আপ খুব ভালো হয়েছে। তবে মোটের ওপর বেদ ও উপনিষদকে ‘হিন্দু’ আইডেন্টিটির গোড়া ভাবা যেতে পারে। ষড়দর্শনের সবকটিই বেদকে মেনে নেয়।
ফুল– সেকুলার বলতে?
গুপ্ত– যেখানে কোনওরকমের ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘামানো হয়নি। মানুষ আর মহাবিশ্বের সম্পর্কটাই এখানে শেষ কথা। অক্টাভিও পাজ-এর ব্রাদারহুড কবিতাটা পড়েছ কেউ?
ফুল– কে আর মাথা ঘামাল… অগণিত সাধারণ মানুষের কাছে আর মাথা ঘামাবার সময় কোথায় ছিল। অবাঞ্ছিত পুঁজি যাদের হাতে অতিরিক্ত সময় এনে দিয়েছিল তারা ছাড়া। পুঁজি না এলে তো ঈশ্বর এত সর্বব্যাপী হত না বলেই মনে হয়।
গুপ্ত– I am a man: little do I last
and the night is enormous.
But I look up:
the stars write.
Unknowing I understand:
I too am written,
and at this very moment
someone spells me out.
আর নাহ ফুল। আমি একমত নই।
ফুল– স্পিরিচুয়াল জার্নির থেকে আমি তার সূত্রটা খোঁজাতে বেশি উৎসাহী। একটা কল্পনা আর একটা মিথের পেছনে ভেড়ার পালের মতো যাওয়া হিরো ওয়ারশিপের লড়াই যখন হবে তখন কে জিতবে?
গুপ্ত– সবকিছুকে পুঁজি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কবিতাটা পড়ো। মনে রেখো টাকা বস্তুটাও মানুষেরই গড়া।
ফুল– টাকা তো পুঁজির শেষ ধাপে। হাজার মানুষের কল্পনা একই রকমের হতে পারে না। দেয়ার মাস্ট বি এ লিডার।
গুপ্ত– ভুল করছ। অনেক মানুষ একইরকম ভাবতে পারে। আর সেটাই মানুষ হবার প্রাইমারি কন্ডিশন। আনাতোল ফ্রান্স নাকি বলেছিলেন নাথিং হিউম্যান ইজ এলিয়েন টু মি।
ফুল–
ভুঁড়ি– গুপ্ত, এটা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ নয়? সিপিএম যেমন মার্ক্সবাদ মানে-টাইপ?
গুপ্ত– আমি তোমাকে রাধাকৃষ্ণণ পড়তে অনুরোধ করব।
ভুঁড়ি– আচ্ছা পড়ে দেখব।
গুপ্ত– ভুঁড়ি, পাজের কবিতাটা ‘আমি’র কথা মনে পড়ায়।
ভুঁড়ি– কিন্তু এখানে আমার মনে সন্দেহ ঢুকল। তবে পড়ে বলা উচিত।
গুপ্ত– কবিতাটার সাবটাইটেলটা ইন্টারেস্টিং। হোমেজ টু ক্লডিয়াস টলেমি।
ভুঁড়ি– সেই তো! সেই রিচার্ড ফিনম্যানের পদ্যেও an universe of atoms, an atom in the universe! আমি, মানব, বিস্ময়ে ভ্রমি একাকী! তোমার সঙ্গে এটুক কথাতেই অনেক উপকার হয়ে গেল গুপ্ত।
সবজান্তা– কি দাঁড়াল তাহলে?
…কবেই বা দাঁড়াল! বাঙালির আড্ডায়! এ এক চিরবহতা স্রোত। গতিই যার সত্তা, যার প্রাণ। স্রেফ গতি। চরৈবেতি…
জ্ঞান যেথা মুক্ত…। এমন আলোচনা আরো হোক। এই আড্ডা বোধহয় শুধু বাঙালির পক্ষেই সম্ভব।