“ডিজেবিলিটি রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশনের প্রধান সমস্যা সচেতনতার অভাব” : কথোপকথনে জিজা ঘোষ

সৌমিত দেব

 

গত ৩রা ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড ডিজেবিলিটি ডে গেল। এটা কি শুধুই এক আনুষ্ঠানিকতা, নাকি এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের প্রতি আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রের মনোভাব সত্যিই পাল্টেছে? এসব নিয়ে কথা বলতেই চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে সৌমিত দেব গিয়েছিলেন জিজা ঘোষের কাছে। জিজা ঘোষ। যাঁকে লোকে সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট বা ডিজেবিলিটি রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট বলে চেনে। কিন্তু তাঁর সঠিক পরিচয় দিতে গেলে বোধহয় বলতে হয়, জিজা ঘোষ এমন একজনের নাম যিনি জীবনটাকে জয় করে ফেলেছেন।

আচ্ছা একদম বেসিক যে হিউম্যান রাইটসগুলো আছে ফর ‘নর্মাল’ পিপল, তার সাথে রাইটস ফর পিপল উইথ ‘ডিজেবিলিটিস’-এর ক্ষেত্রে কি কোনও পার্থক্য আছে?

এখানেই তো আমার আপত্তি। এই নর্মাল কথাটায়। কারা নর্মাল? হাউ ডু ইউ মেজার নর্মালিটি? অ্যান্ড হাউ ডু ইউ মেজার ডিজেবিলিটি?

সেরিব্রাল পালসি। এ রোগটা সম্পর্কে ইন্টারনেটে পাতার পর পাতা তথ্য, কেস স্টাডি ইত্যাদি রয়েছে। একবার সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন যদি বিশদে জানতে চান। আমি এখানে ছোট্ট করে বলে দিই, যে সেরিব্রাল পালসি হয় মস্তিষ্ক বা ব্রেনের বিকাশের অস্বাভাবিকতার কারণে। সেটা নানা কারণে হতে পারে। জিজা ঘোষের উইকিপিডিয়া পেজে যেমন এর কারণ হিসেবে ব্রেনে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছনো বলা হয়েছে। একেবারে ছোট বয়স থেকেই এই রোগের প্রভাব দেখা যায়। লক্ষণ হিসেবে বলা যায়… দেখুন বেশ খানিকক্ষণ কেতাবি ধরনে চেষ্টা করলাম। হচ্ছে না। জিজাকে যেমন এই সেরিব্রাল পালসি নামক বিষয়টা কোনও ছকে ফেলতে পারেনি, তেমনই। তাঁকে নিয়ে লেখার এই সুযোগটাও ওই ছকে বাঁধা কায়দায় হবে না। হতে পারে না। আর ইন্টারভিউটাই যখন ছকে বাঁধা হয়নি তখন বাকিটাও না কেন হবে? যাকগে, তো যেটা বলছিলাম, সেরিব্রাল পালসিতে কী হয় বলুন তো? খুব সহজে বললে আমি বা আপনি (কী সহজে ভেবে নিলাম দেখেছেন যে আপনিও ‘নর্মাল’?) এই যে বলি না “হাঁটাচলার মতো স্বাভাবিক একটা ব্যাপার”, সেরিব্রাল পালসিতে সেটা হয় না। হাঁটাচলা, হাত পা নাড়ানো, পরিষ্কার করে কথা বলা, যেগুলো শুধুমাত্র জন্মে গেছি বলেই আমারা ‘স্বাভাবিকতা’র কোটায় পেয়ে গিয়ে নিজেদের নর্মাল বলি, ‘ওঁদের’ ক্ষেত্রে সেটা নর্মাল নয়। যেহেতু আমি খেয়াল হলেই হাতটা পেছনে নিয়ে গিয়ে ঘ্যাসঘ্যাস করে পিঠ চুলকোতে ‘এবেল’— এই ধারণাটাই আমাদের সো কলড এবেলিটির প্রমাণ হয়ে গেল? আর যারা সেটা পারে না তারা ডিজেবল? না না আমি মক করছি না, আমিও জানতে চাই। চেয়েছিলাম। ওপরের ওই উত্তর পেয়েছি।

আচ্ছা যে সমস্ত জায়গায় আমাদের রোজ রোজ যেতে হয়, সেটা শপিং মল হোক বা সরকারি বেসরকারি জায়গা, তারা কি ‘ডিজেবল’ মানুষদের প্রতি আলাদা কোনও যত্ন নেয়? বা তাদের সুবিধের দিকে মন দেয়?

এখনকার শপিং মলে তবু যারা আমাদের মতো, হুইলচেয়ার ব্যবহার করে, তারা ঢুকতে পারে। একটা র‍্যাম্প আছে। কিন্তু পাবলিক বিল্ডিং, ইউটিলিটি বিল্ডিং, একটা গভর্নমেন্ট অফিস, সেখানে একটা লোকোমোটেড ডিজেবিলিটি বা হুইল চেয়ারে যাওয়ার সুবিধে নেই। দোতলার ওপর অফিসে লিফট নেই। বা আমাদের এখানে তো অদ্ভুত। লিফট আছে, কিন্তু তার আগে তিনটে সিঁড়ি। মানুষে যাবে কী করে?

সেটাও কী আপনি যেটা বললেন একটু আগে…

ল্যাক ওফ অ্যাওয়ারনেস। ল্যাক ওফ এমপ্যাথি।

জিজা ঘোষ সেরিব্রাল পালসি নিয়ে জন্মেছেন। তারপর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সেরিব্রাল পালসি এবং লা মার্তিনিয়্যার ফর গার্লস থেকে প্রেসিডেন্সিতে সোশিওলজি অনার্স হয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ‘দিল্লি স্কুল ফর সোশাল ওয়ার্ক’ থেকে কোয়ালিফায়েড সোশাল ওয়ার্কার, উইকিপিডিয়াতে সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট দেখায়, ঠিকই দেখায়। যাদবপুরেও ইংরিজি নিয়ে কিছু একটা বলেছিলেন মনে হয়, আড্ডা দিয়ে ফিরে অত খুঁটিনাটি মনে থাকে না। যাদবপুরটা মনে আছে কারণ ওই যাদবপুরের সময় থেকেই ওনার হিউম্যান রাইটস অফ পিপল উইথ ডিজেবিলিটিস নিয়ে কাজ করার প্রাথমিকভাবে শুরু। আর মনে না রাখার আর একটা কারণও আছে। হিয়া। ভদ্রমহিলার বয়স এগারো মাস। কিন্তু উনি মোবাইল আর টলমল পায়ে হাঁটতে অকথ্য ভালোবাসেন। আর ওনার সর্বক্ষণ চাই অ্যাটেনশন। ঘরে ঢোকার পর আগে কোলে বসিয়ে, মোবাইল দিয়ে ওনার মনোরঞ্জন করতে হয়েছে। তারপর অন্য কথা। এমনকি দু’মিনিটের বেশি ভদ্রমহিলার দিকে কেউ না তাকালেই ব্যস। আমাদের আড্ডার গোটা রেকর্ডিংটা জুড়ে শুধু হিয়ার ডাক। একটু তাকালেই ব্যস চুপ। কিন্তু যেই না আবার নিজেদের কথা বলা শুরু করেছ! হিয়া হলেন জিজার একমাত্র কন্যা।

ওই ভদ্রমহিলা তো… (হিয়াকে উদ্দেশ্য করে)

ওটা হনুমান। পুরো হনুমান। সারক্ষাণ দুষ্টুমি।

কত বয়স হল ওর?

এগারো মাস। ওর নাম হিয়া। ওকে যখন আমরা অ্যাডাপ্ট করি তখনও আমাদের অনেক প্রবলেম হয়েছে।

কী প্রবলেম হয়েছিল?

মানে আমার ডিজেবিলিটির জন্যে ওরা ওকে দিতে চাইছিল না। ওই আর কী… ল্যাক ওফ অ্যাওয়ারনেস… ল্যাক ওফ অ্যাওয়ারনেস। আর এখন তো অ্যাডাপশন পুরোটা সেন্ট্রালাইজড। কারার আন্ডারে। তো আমরা কারাকে লিখি। কারা আমাদের সাপোর্ট দিয়েছিল। সেই ভাবেই ওর অ্যাডাপশনটা হল। কিন্তু এখনও বার্থ সার্টিফিকেট আমরা পাইনি। একটা এল, তাতে ওর নাম ভুল। আবার পাঠানো হয়েছে।

প্রায়োরিটি বিষয়টা নিয়ে আমরা যে প্রবল মাথা ঘামাই, আমাদের ক্রমবর্ধমান ভেঙে যাওয়া মনগুলোই তার প্রমাণ। দরকার না ইচ্ছে? কোনটা? যখন আমার কথা বলতেও সমস্যা হয়, জড়িয়ে যায়, হাঁটচলার কথা নয় ছেড়েই দিলাম, তখন কী সেই চালনাশক্তি যা আমাকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়? থিয়েটারে অভিনয় করিয়ে নেয়? ফিল্মে কাজ করিয়ে নেয়? আমি সিনেমা দেখি! আর এই সবগুলো আমি করি আমার কাজটা আগে করে নিয়ে বেজায় স্বাভাবিকভাবে। রোজ রোজ। জন্ম থেকে প্রতিটা মুহূর্ত আমি কীভাবে বাঁচি নিজের শর্তে? এমন সব প্রশ্ন তো আসেই তাঁর কাছে, যিনিও বেশ একটা জাঁদরেল, একটা প্রতিনিয়ত চলা যুদ্ধে জয়টাকে অভ্যাস করে ফেলা বিজয়ীর গর্বভরা উত্তর দেবেন, আর আমি তা দিয়েই কিনা লেখাটা শুরু করতে পারব। তাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম–

আপনার রোজকার একটা দিন কেমন? মানে যেটাকে আমরা রেগুলার টিপিক্যাল ডে বলে থাকি।  

এখন তো আর টিপিক্যাল ডে বলা যায় না। আগে অফিসে যেতাম কাজ করতাম ফিরে আসতাম। এখন তো কোনও ঠিক নেই। একেক দিন সকাল আটটায় বেরোই রাত দশটায় ফিরি। কোনও ঠিক নেই। পুরোটাই কেমন হ্যাপাজার্ড।

একটা মানুষ, যে যুদ্ধটাকে যুদ্ধ বলেই মনে করে না। করে না কারণ সময় নেই। সময় নেই কারণ নতুন কিছু করতে হবে তো? আরে আমার হাজারটা ‘সমস্যা’ থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে তো আমি আমার মনটাকে আটকাতে পারব না। যে প্রতিনিয়ত আমার মতো হাজার হাজার মানুষের কথা ভেবেই চলেছে ২৪*৭। তাঁদের জন্যে যদি কিছু নাই করতে পারি তাহলে কীসের বেঁচে থাকা!

আচ্ছা এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি কী নিয়ে কাজ করছেন?

এই সময়ে? আমি তো আগে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ডিজেবল পার্সন-এ কাজ করতাম, কাজটা ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিয়ে আমরা নিজেরা অর্গানাইজেশন তৈরি করেছি। একটা কমার্শিয়াল সেকশন। মানে যেটা আমরা করছি উইথ আ লাইবেলিটি পার্টনারশিপ। এটা পুরো কমার্শিয়াল। আর সাইড বাই সাইড আমরা একটা এইড অর্গানাইজেশন খুলেছি। লাইক অ্যান এনজিও। বাট ওটা অনেক ট্রান্সপারেন্ট। আমাদের দুটো খোলার কারণ, একটা হচ্ছে আমরা সোশাল সেক্টরে কাজ করতে চাই। কিন্তু তার সাথে কিছু কাজ আছে যেটা পুরোটা সোশাল সেক্টরে করা যায় না। মানে যেমন আমরা আজকে ধরা যাক ভোক্যাল ট্রেনিং দিলাম ওটাকে কিন্তু আমরা কর্মাশিয়ালি মার্কেট করতে পারব না। তখন আমাদের একটা কর্মাশিয়াল অর্গানাইজেশন লাগবে। তাই জন্যে আমরা দুটো অর্গানাইজেশন সাইমালটেনিয়াসলি করেছি।

আচ্ছা এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে আপনাদের কেমন বাধা কেমন অবস্ট্যাকেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে?

এই কাজটা তো আমরা সবে শুরু করেছি, এই একমাস আগে আমাদের লঞ্চ হল। জাস্ট স্টার্টেড। আমাদের একটা অফিস স্পেস নেই। যে যার নিজেদের বাড়িতে এনে কাজ করছি। তো এখন তো উই হ্যাভ আ লং ওয়ে টু গো।

কাজটা করতে গিয়ে আপনাকে প্রধানত কোন অসুবিধেগুলোর মধ্যে পড়তে হয়?

কাজটা করতে গিয়ে যেটা আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যারিয়ার সেটা হচ্ছে লোকের অ্যাটিটিউড। লোকের অ্যাটিটিউড পালটানো ব্যাপারটা খুব অ্যাবস্ট্র্যাক্ট। মানে কতটা পাল্টাল মেজার করা খুব ডিফিকাল্ট। আর যে যে প্রবলেমগুলো হয়, অনেকটাই কিন্তু লোকের এই নেগেটিভ অ্যাটিটিউডের জন্যেই হয়। তো এটা একটা ড্র ব্যাক তো বটে। এটা চেঞ্জ করা দরকার। আমাদের ল’গুলো আছে, কিন্তু সেগুলো ইমপ্লিমেন্টেড নয়, সেটা একটা বড় অসুবিধে।

কোনটা বেশি এনজয় করছেন, এটা না আগেরটা?

সেটা তো বলা যায় না।

দুটোই সমানভাবে এনজয় করছেন?

হ্যাঁ।

এই এনজয় করাটা আবার প্রতিটা লোকের ক্ষেত্রে আলাদা। আমার যেমন মনে হয় ভাস্কর চক্রবর্তীর চাইতে বড় কবি (হ্যাঁ! আমি আমার প্রতিটা লেখায় এভাবেই ভাস্কর ভাস্কর করব! বেশ করব!) আর জন্মায়নি, জিজার আবার রোম্যান্টিক এজটা বড় প্রিয়। কিটসের কথা বললেন। আর রবীন্দ্রনাথ। তবে এখানে জগজিৎ সিং সকলকে গোল দিয়ে বেরিয়ে গেছেন! ওই লোকটা না…

আপনি তো থিয়েটার করেন।

হ্যাঁ আমার বন্ধুর দলে। ও’ই থিয়েটারে আমার ইন্টারেস্ট গ্রো করে। ও’ই আমাদের ডিরেক্টর।

যে থিয়েটারটায় আপনি মূলত অভিনয় করছেন, ব্ল্যাক হোল আর নট ব্ল্যাক, সেই থিয়েটারে, অত দর্শকের সামনে অভিনয় করবার এক্সপেরিয়েন্সটা ঠিক কেমন?

থিয়েটারের এক্সপেরিয়েন্স ওটা একটা আলাদা। অত দর্শকের সামনে। তবে ওই প্রাথমিক স্টেজফ্রাইট কাটানোটা একটা। ওটা কেটে গেলে পারফরমেন্সের পর এত ওয়ার্ম একটা গ্রিটিং। আমরা সবচাইতে বেশি যেটা ভালো লাগে তা হল দর্শকদের সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করতে।

আপনার কাজটা করতে গিয়ে তো সামনের মানুষটাকে ইনটার‍্যাকশনের মাধ্যমে ইনভলভ করে তোলাটা বেশ জরুরি। তার মানে আপনি সেইটেও বেজায় এনজয় করেন?

তা করি। আমরা যখন কাজ করতে যাই তখন সামনের মানুষটার উত্তরগুলো বেশি মন দিয়ে শুনি। আমরা যে একটা কাজ রেগুলার করি সেটা হল ট্রেনিং। আমরা রেগুলোর যাই, ওদের ট্রেনিং হয়। আমরা একটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে সেশন নিই। এটা হল হাউ টু হ্যান্ডেল আ পার্সেন উইথ ডিজেবিলিটি ভেরি সেন্সিব্‌লি।

কবিতা লেখাটা?

এখন আর লেখা হয় তেমন কই! তবে পড়বার ক্ষেত্রে আমার রোম্যান্টিক এজটাই বেশি পছন্দের। কিটস যেমন, আর রবীন্দ্রনাথ।

সিনেমা দেখেন?

এখন বেশি দেখা হয় না।

আর গান?

আমার রবীন্দ্রসঙ্গীত আধুনিক সবই ভালো লাগে। তবে জগজিৎ সিং-এর আমি প্রচণ্ড ফ্যান।

তার মানে গজল আর রোম্যান্টিক এজের কবিতা…

(হেসে) হ্যাঁ…

এই নিয়ে হয়ত আরও আড্ডা আরও চলত কিন্তু তাহলে সোমেনদা বেজায় গালাগাল করত। আত্রেয়ীদি খাওয়াতে নিয়ে যেত না। এরা কেউ ভালো লোক নয়। এদের খুবই প্যাঁচাসুলভ হাবভাব। তাই যে জন্যে যাওয়া সেই প্রসঙ্গগুলোতেই আবার ফিরে আসতে হল। তবে বাগ্মিতা থাকলে প্রসঙ্গ যাই হোক না কেন তা কথা বলবার অন্তরায় হয় না। জিজা অসামান্য বাগ্মী। দারুণ কথা বলেন। যে কোনও বিষয়ে।

আচ্ছা আমরা যখন হিউম্যান রাইটস নিয়ে কথা বলছি, সেখানে কী পার্সন উইথ ডিজেবিলিটিস কোনওরকমভাবে পিছিয়ে থাকছে?

হ্যাঁ পিছিয়ে তো আছেই। ইগনোরেন্স, আর যে বললাম ল্যাক ওফ অ্যাওয়ারনেস। এবং লিগাল রাইটস। রাইটস অফ আ পার্সন উইথ ডিজেবিলিটি ল ২০১৬ আমাদের আছে। কিন্তু তা যতটা কার্যকরী হয়েছে, যতটা ইমপ্লিমেন্টেশন হয়েছে, সেটায় বিশাল গ্যাপ।

মানে ল একটা হয়ে যায় কিন্তু সেটা ইমপ্লিমেন্টেশন হতে অনেকটা দিন লেগে যায়, তাই তো?

হ্যাঁ।

‘ওয়ার্ল্ড ডিজেবিলিটি ডে’কে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমার একটা ব্যাপারে আপত্তি আছে। যে একদিন ওয়ার্ল্ড ডিজেবিলিটি ডে পালন করলাম, তারপর ভুলে গেলাম। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে কোনও মানে নেই। তবু এটা একটা, লোকেরা আরও জানছে, লোকেদের কাছে আমরা পৌঁছোতে পারছি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এটার একটা পজিটিভ দিক তো অবশ্যই আছে।

যদি হিউম্যান রাইটসের প্রসঙ্গ আসে, সেই ক্ষেত্রে ‘ডিজেবল’ মানুষরা কতটা নেগলেকটেড?

সেটা বলতে গেলে বলব পুরোপুরি। কারণ যারা শহরে আছে তারা তাও ইন আ বেটার পোজিশন। কিন্তু যারা গ্রামে আছে তাদের তো কোনও ফেসিলিটি নেই। বাচ্চাটা কোথায় যাবে? রিহেবিলিটেশন নেই, তার কোনও জায়গা নেই। কোথাও আসতে গেলে শহরে আসতে হবে, সেটা তো সবসময় সম্ভব নয়। একটা ডিজেবিলিটি সার্টিফিকেট করাতে গেলেও ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালে যেতে হবে। শহরে যেটুকু আছে, গ্রামের দিকে কিছুই নেই।

আচ্ছা এই যে সোশাল মিডিয়ায় হিউম্যান রাইটস নিয়ে এত কথাবার্তা হয়, আপনার কী মনে হয়, সেখানেও হিউম্যান রাইটস অফ ডিজেবল পিপল এই ল্যাক ওফ অ্যাওয়ারনেসটার জন্যে নেগলেগটেড?

সোশাল মিডিয়াতে তো তাও হয়। সোশাল মিডিয়ার জন্য তাও আমরা কিছু লোকের কাছে পৌঁছোতে পারি। আগে তো সেটুকুও ছিল না। সব কিছুরই তো একটা পজিটিভ নেগেটিভ দিক থাকে।

আড্ডা শেষ হয়ে আসছিল। হিয়াকে তখন আবার আরেকটা মোবাইল দিয়ে শান্ত করতে হয়েছে। কিন্তু সেটার স্বাদটা ভদ্রমহিলার ঠিক ভালো লাগেনি তাই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। জিজা খালি একবার “গেল!” বলা ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারেননি। বোঝা গেল ভদ্রমহিলা নিজের এই সমস্ত খামখেয়ালে পৃথিবীবাসীকে অভ্যস্ত করিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে উনি মুখে একটা জলের বোতল গুঁজে গোটা ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার ‘স্বাভাবিক’ ব্রেন আমাকে যেভাবে তৈরি করে জিজার বাড়িতে পাঠিয়েছিল সে এক্সকিউজ মি বলে দিয়েছে। আমিও বসে বসে হিয়াকে দেখছি আর ভাবছি, বলে দিতে হবে না এ জিজার মেয়ে। নিজের শর্তে বাঁচার এই দাপটটা না হলে আমার মতো ‘এবেল’ ব্ল্যাকশিপদের নেই। কিন্তু যেহেতু ছোটবেলাতেই বাড়িতে শিখিয়ে দিয়েছে— যেখানেই যাবি কিছু একটা দিয়ে আসবি তাই আমি স্বাভাবিকভাবেই যেখানেই যাই সেখান থেকেই কিছু একটা নিয়ে আসবার চেষ্টা করি। বেশিরভাগ সময়েই অবশ্য সেটা বই হয় (হ্যাঁ আমি বইচোর! ফাইন!)। তাই জিজাকে জিজ্ঞাসা করলাম…

বর্তমানে দাঁড়িয়ে আপনার লক্ষ্যটা বা গোলটা ঠিক কী?

গোল বলতে তো আমাদের এই অর্গানাইজেশনটাকে দাঁড় করানো। যে জন্যে আমরা চাকরি ছেড়েছি, সেই আইডিওলজিটা নিয়েই যাতে আমরা কাজ করতে পারি সেটাই আমাদের গোল।

আচ্ছা এবার একটু টিপিক্যাল ইন্টারভিউয়ের মতো করে প্রশ্ন করি? আপনি জীবনকে কীভাবে দেখেন?

জীবনে সবচাইতে বোধহয় দরকার নিজে আনন্দে থাকা। কাজ নিয়ে, যেটা করতে ভাল্লাগে সেটা নিয়ে কাজ করা, এনগেজ থাকা। সবার সাথে মিলেমিশে থাকা, সবাইকে নিয়ে থাকা।

সাথে ছবিটা জিজা আর হিয়ার। ফটোগ্রাফারের হাত ভালোলাগার উত্তেজনায় কেঁপে গেছে।

জিজা ঘোষ, যার কাছে শেখার আছে একটাই জিনিস। বাঁচার মতো করে বাঁচা।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4885 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...