চুরাশির শিখনিধন : এক প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি

স্বরণপ্রীত সিং

 

স্বরণপ্রীত সিং ওয়ারউইক মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক, যুক্তরাজ্যের ইকুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশনের অন্যতম কমিশনার, বার্মিংহ্যাম অ্যান্ড সোলিহাল মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন-এর সাম্মানিক পরামর্শদাতা মনোবিজ্ঞানী এবং মেন্টাল হেলথ রিসার্চ নেটওয়ার্কের হার্ট অফ ইংল্যান্ডের ট্রাস্ট হাব প্রধান। সার্জন হিসাবে প্রশিক্ষণ শুরু করলেও অধ্যাপক সিং পরবর্তীকালে মানসিক স্বাস্থ্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কারণ, চুরাশি সালের দিল্লির দাঙ্গাপীড়িত শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা। মনোবিজ্ঞানী হিসাবে প্রশিক্ষণ নিতে অধ্যাপক সিং ১৯৯০ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ইংল্যান্ডে চলে আসেন। গবেষণার বিষয় মূলত প্রারম্ভিক সাইকোসিস, সোমাটাইজেশন, স্বদৈহিক ক্ষতিসাধন, মানসিক পীড়ার সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক উপাদানসমূহ, মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আইনকানুন ও চিকিৎসাবিদ্যা। ডঃ সিং-এর মূল ইংরাজি লেখাটি বাংলা অনুবাদের নিচে দেওয়া হল।

৩১শে অক্টোবর, ১৯৮৪। তিন দশকের বেশি কেটে গেল। সেই দিনটি— যে দিনে ইন্দিরা গান্ধি তাঁর শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। ভারতের বাইরে মুষ্টিমেয় কিছু লোকই তার পরের ঘটনাগুলি জানেন। আর তাঁর চেয়েও অল্প কজনের স্মৃতিতে এখনও জেগে রয়েছে সেই পরের বাহাত্তর ঘণ্টা— হাজারেরও বেশি মানুষ খুন হয়ে গিয়েছিলেন যে সময়ের মধ্যে। সেই অল্প কজনের মধ্যে আমি একজন।

সেই সময় আমি দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা একজন ট্রেনি সার্জেন। রক অ্যান্ড রোল, বিয়ার আর ক্রিকেট ভালোবাসি। পাঞ্জাবের উত্তরাংশ তখন শিখ জঙ্গি এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে হিংসায় দীর্ণ হচ্ছে। সমাজের পুরো মেরুকরণ ঘটে গেছে, ফলে আমাদের মতো যারা যারা মনে করত যে দুই তরফই যথেষ্ট নৃশংসতার নজির রেখে চলেছে, তাদের চিৎকার করে থামিয়ে দেওয়া হত। যথেষ্ট হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। সেই জীবনও পালটে গেল ওই দিনটা থেকে— ৩১শে অক্টোবর ১৯৮৪— সকাল ৯টা ২০…।

সেই সকালে আমি ওয়ার্ড দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। ক্লার্কটি, যে এমনিতে ভক্তিশ্রদ্ধাই করত, আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল— “তুম হারামজাদোঁনে মার দিয়া ম্যাডাম কো!”

আমি হঠাৎ করে তার কথা বুঝে উঠতে পারিনি। একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি শুনলেন? কী বলছেন উনি?” নার্সটি বলল, “আপনি শোনেননি? ইন্দিরা গান্ধিকে তাঁর শিখ দেহরক্ষীরা গুলি করেছে। তাঁকে এইমস-এ নিয়ে আসা হয়েছে।”

এইমস ছিল আমাদের বড়লোক প্রতিবেশী। ভিআইপিরা চিকিৎসা নিতেন সেখানে, আর আমাদের হাসপাতালে মূলত গরিব মানুষ, যাদের আবার কোনও রাজনৈতিক দাদাদিদিও নেই। সে যাই হোক, আমি তো তক্ষুণি দৌড়ে এইমসে গেলাম, আর গিয়ে দেখলাম ইতিমধ্যেই সেখানে ভিড় গিজগিজ করছে। চারিদিকে লোক, ফিসফিস করে কথা, থেকে থেকেই অ্যালার্ম বাজিয়ে সরকারি লোকেদের আনাগোনা, আর সমস্ত জায়গাতেই পুলিশ আর নিরাপত্তারক্ষীতে ছয়লাপ। ভেজা বাতাস যেন অমঙ্গলের দ্যোতনায় ভারি হয়ে রয়েছে।

একজন কলিগ তাড়াতাড়ি এসে বলল, “শিখদের জন্য এখানটা নিরাপদ নয়। তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও।” কোথা দিয়ে যাব? দরজায় তো মানুষ থিকথিক করছে! তার মধ্যে দিয়েই যখন চেপেচুপে বেরোতে গেলাম প্রথমে কানে এল “ইউ বাস্টার্ডস!” আর তারপরেই ঘাড়ের মধ্যে একটা রদ্দা। সে সময়ে পাগড়ি পরতাম আমি, আর রদ্দার ঘায়ে সেটা খুলে গেল। কোনওরকমে সেটা ধরে ঠেলেঠুলে বেরোচ্ছি, পিঠের মধ্যে তখন বৃষ্টির মতো কিল ঘুঁষি পড়ছে। কোনওমতে একটা অটোতে উঠতে পেরেছিলাম বেরিয়ে।

আমার কিন্তু শারীরিক আঘাত খুব একটা অনুভূত হয়নি, বরং যা অনুভব করেছিলাম তা আমাকে আপাদমস্তক নাড়িয়ে দিয়ে গেছিল বলা যায়। আমি বুঝেছিলাম, আমার ওপর যে আঘাতগুলো পড়ল সেগুলো আসলে ক্ষোভ এবং শোকের বহিঃপ্রকাশ, যা পরিণত হয়েছিল ক্রোধে। এমনকি নির্দিষ্ট করে আমাকেই যে মারতে চাওয়া হয়েছিল এমনটাও নয়, কিন্তু মারতে চাওয়া হয়েছিল একজন শিখকে। কারণ, ‘ভারতমাতা’ ইন্দিরা গান্ধির এই পরিণতির জন্য শিখরাই দায়ী।

সেই রাত থেকেই হত্যালীলা শুরু হয়। ন্যাশনাল টেলিভিশনে সমানে ইন্দিরা গান্ধির দেহ ঘিরে থাকা উন্মত্ত জনতাকে দেখাচ্ছিল, যারা চিৎকার করে যাচ্ছিল ‘খুন কা বদলা খুন’ বলে। উইকিপিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে ’৮৪-র শিখনিধন কাণ্ডের প্রথম বলি হয় ১লা নভেম্বর। কিন্তু আমি নিজেই একজন বয়স্ক মানুষকে জানি যাঁকে ৩১ তারিখ রাত নটা নাগাদ খুন করা হয়েছিল। চূড়ান্ত নৈরাজ্যের সময় প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা করা খুব মুশকিল।

এই ‘খুন কা বদলা খুন’ কথাটা হু হু করে ছড়াতে লাগল, বারংবার উচ্চারিত হল, গোটা জাতির কাছে প্রচার করে দেওয়া হল। আর গুজব? কয়েকটা নমুনা দিই— পাঞ্জাবে যে সব ট্রেন ঢুকছে, তাদের সব হিন্দু যাত্রীদের শিখরা খুন করছে; শিখরা উৎসব করছে, মিষ্টি বিলোচ্ছে; শিখরা দিল্লির জলে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে!

আমাদের লোকাল থানার দুই অফিসার মেগাফোন হাতে আমাদের এলাকায় এসে বলে গেল, “জল খাবেন না। শিখরা জলে বিষ মিশিয়েছে!” আমি ধরলাম তাদের। বললাম, “ট্যাপের জল মানুষের ধর্ম চেনে? জলে বিষ মেশালে দিল্লির শিখরা সেটা থেকে বাঁচবে কী করে? কেন এসব গুজব ছড়াচ্ছেন?” দুজনের মধ্যে একজন আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।

আমাদের এলাকাটায় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু হলেও প্রচুর শিখ পরিবার ছিল। স্থানীয় মন্দিরে দুই সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষেরা মিলে একটা মিটিং করলেন। আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা আমাদের পুরোপুরি আশ্বস্ত করেছিলেন যে তাঁরা আমাদের বাঁচাবেন। আমরা ক্রিকেট ব্যাট, হকি স্টিক, টেনিস র‍্যাকেট, কুড়ুল, ঝাঁটা যা হাতে পেলাম সেইসব নিয়ে রাস্তায় পাহারা দিতে শুরু করলাম, কোনও উন্মত্ত জনতার দল আসছে কিনা লক্ষ রাখার জন্য কমবয়েসি ছেলেমেয়েরা ছাদে পাহারা দিতে শুরু করল। আমার বাবার কাছে একটা শিখদের চিরাচরিত তরোয়াল ছিল। লম্বায় চার ফুট, কিন্তু ভোঁতা। আমি সেটা খাপ খুলে নিয়ে বেড়াতে শুরু করলাম, কিন্তু সেটা চালাতে পারার মতো স্নায়ুর জোর আমার আছে কিনা সে নিয়ে নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। দূর থেকে আগুন জ্বলতে দেখতাম। খবর পেতাম শিখদের দলে দলে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু সেসব দেখার কোনও উপায় ছিল না।

পরের তিনদিন আমার যা অভিজ্ঞতা হল, তেমন আর গোটা জীবনে হয়নি। আমি যেন শিকার, শিকারীর তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। যেন আমি আমার নিজের দেশেই শত্রু। আমার নিজের দেশেরই কিছু মানুষ আমাকে আর আমার পরিবারকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কংগ্রেসের সিনিয়র লোকেরা আমাদের চিনবে না এমন জনতা জোগাড় করেছিল। তাদেরকে ভোটার তালিকা দিয়ে দিয়েছিল যাতে শিখ পরিবারগুলিকে তারা চিহ্নিত করতে পারে। সেই উন্মত্ত জনতাকে মদ খাওয়ানো হত, প্রত্যেককে এক হাজার করে টাকা দেওয়া হত, আর দেওয়া হত কেরোসিন ভর্তি জারিকেন। তারা কোনও শিখ বাড়ি ঘিরে ফেলে সমস্ত পুরুষ সদস্যদের বেরিয়ে আসতে বলত। বেরিয়ে এলে তাদের পা ভেঙে দিয়ে গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হত। গোটা ঘটনাটা ঘটানো হত মহিলা এবং শিশুদের চোখের সামনে। ধর্ষণ, লুটপাটও হত, তবে জনতার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ওই— ‘খুন কা বদলা খুন’।

তিনদিন ধরে চলল এই নারকীয়তা। প্রায় ৮০০০ শিখ খুন হলেন উত্তর ভারতে, যার মধ্যে দিল্লিতেই ৩০০০-এর বেশি। ৪ঠা নভেম্বর আমি এক হিন্দু বন্ধুর গাড়ির পেছনে লুকিয়ে এলাকা থেকে বেরোতে পারলাম। গেছিলাম কয়েক মাইল দূরে এক পরিবারের খোঁজে, কিন্তু যেতে যেতেই দেখলাম পথঘাট খাঁ খাঁ করছে, আর গিয়ে দেখলাম পরিবারটি ইতিমধ্যেই অন্য কোথাও পালিয়ে গেছে। সেখানে একটি মেয়েকে পেলাম, বছর পনেরো বয়স, বিচ্ছিরিভাবে পুড়ে গেছে, কোনওমতে ধুকধুক করে বেঁচে আছে। আমরা মেয়েটিকে নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু হাসপাতালের এ অ্যান্ড ই কনসালটেন্ট তাকে ভর্তি নিল না। একটা ত্রাণ শিবির দেখতে পেয়ে শেষমেশ মেয়েটিকে সেখানে দিয়ে আসলাম। আজ অবধি আমি জানি না মেয়েটি বাঁচতে পেরেছিল কিনা!

জানেন, একটা কলোনি রয়েছে বিধবা কলোনি নামে! হ্যাঁ, এটাই নাম— উইডো কলোনি। কয়েক হাজার বিধবা মহিলা এবং শিশুদের এখানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। এই মহিলাদের সঙ্গী চিরস্থায়ী বিলাপ, বাচ্চাগুলি বড় হচ্ছে অবহেলায়, আর বড় হচ্ছে চারিদিকে সেইসব লোকেদের দেখে যাদের হাতে তাদের বাবা দাদু কাকা দাদারা খুন হয়েছেন। খুনিরা নিরাপদেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা জানে তারা আইনের ঊর্ধ্বে।

আমি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সেই কলোনিতে যাওয়া শুরু করলাম। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বাচ্চাগুলোর সঙ্গে একটু খেলাধুলো করা, যাতে ওদের একটু ভালো লাগে। একটা পার্কে ডাকতাম ওদের, কিন্তু ওরা কেউই আসত না। অচেনা মানুষ এতটাই আতঙ্ক ছিল ওদের কাছে। কিন্তু আনতেও তো হবে, তাই অন্য কায়দা নিলাম। বলে দিলাম, যেসব বাচ্চারা পার্কে আসবে তাদের পরিবারকে বিনা খরচায় চিকিৎসা করা হবে। এতে কিছু কাজ হল। নিজের সার্জিক্যাল কেরিয়ার বাদ দিয়ে এখন থেকে আমার কাজ হয়ে দাঁড়াল সপ্তাহে একদিন করে ডাক্তার বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ওষুধপত্র সংগ্রহ করা আর সপ্তাহান্তে একটা অস্থায়ী ক্লিনিক চালানো। যে হপ্তাগুলোতে ওষুধ জোগাড় হত না, সেইগুলিতে আমি একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে সেইসব রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সাবুদ জোগাড় করে বেড়াতাম যারা এই উন্মত্ত জনতাকে লেলিয়ে দিয়েছিল।

দু’ বছর ধরে কাজ করেছিলাম পরিবারগুলির সঙ্গে। দেখলাম সমস্ত সরকারি তদন্তই দোষীদের খালাস করে দিল। যতই ঠোস সাবুদ দেওয়া হোক না কেন, সবই খারিজ হয়ে গেল যুক্তিহীন কারণ দেখিয়ে। মনোবিদ হব ঠিক করলাম। চণ্ডীগড়ে চলে এলাম। সেখানে সেই শিখ জঙ্গি এবং সরকারের মধ্যে হিংসার চক্র জারি রয়েছে একইভাবে। পুরোপুরি ভাঙা মন নিয়ে ১৯৯০ সালে দেশ ছাড়লাম। শপথ নিলাম, আর কখনও ফিরব না।

২০১৪-তে সেই উইডো কলোনিতে গেছিলাম আবার, বিবিসি-র একটা ডকুমেন্টারি টিমের সঙ্গে। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলাম– বিশেষ করে বয়স্করা, যাঁরা সেই সময়ে আমার ক্লিনিকে আসতেন। একজন আমায় চিনতে পারলেন! এই তিন দশকে চেহারা এত পালটে গেছে, তা-ও! যাই হোক, জীবন, সেই একই রকম! একটা চিরস্থায়ী বিষাদ আর একটা সামগ্রিক পরাজয়ের অনুভূতি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘেরা। দুটো তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম সেই সফরে। তথ্য দুটি আমি আগে থেকেই জানতাম, কিন্তু আগে কখনও তার সত্যতা যাচাই করিনি। প্রথমত, একজন সার্জেন, যিনি এইমস-এ ইন্দিরা গান্ধির চিকিৎসা করেছিলেন, তিনি জানালেন সেই সময়ে তাঁর ওয়ার্ডে স্টাফরা আহত শিখদের ভর্তি করতে দেয়নি। আর দ্বিতীয়ত, কিছু মহিলাকে ধর্ষণও করা হয়েছিল, আমার সঙ্গে তেমন একজনের কথাও হয়েছে। আসলে ভারতবর্ষ কোনওদিনই সেই দিনগুলির যাবতীয় নারকীয়তার পূর্ণাঙ্গ মোকাবিলা করেনি। এখন আপনি ওখানে যদি যান, ওপর ওপর দেখতে তো পাবেন জীবন চলে যাচ্ছে, কিন্তু একটু ভেতরে হাত দিন, ’৮৪-র সেই দগদগে ঘায়ের পুঁজ রস আপনার হাত মাখামাখি করে দেবে। আমাদের সেই ক্লিনিকটা এখনও যারা চালায় তাদের সঙ্গে দেখা করলাম। শুনলাম অনেক মহিলাই অকালে মারা গিয়েছেন, আর কমবয়েসি ছেলেরা মদ, ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়েছে, চুরি ডাকাতি ছিনতাই-এ জড়িয়ে পড়েছে, এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছে।

সজ্জনকুমারের রায়টা শোনার পর এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। একদিকে ভালো লাগছে, তো আর একদিকে মনে হচ্ছে, এত দেরি করে বিচার?! এ তো আসলে বিচার না হওয়ারই সামিল! একদিকে খুশি খুশি লাগছে, যে শেষমেশ লোকটা শাস্তি তো পেল, তো অন্যদিকেই মনে হচ্ছে এ তো মাত্র একজন! আরও বহু খুনি তো আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর শুধু ঘুরেই বেড়াচ্ছে না, সরকার এবং সমাজের উঁচু উঁচু পদ হাসিল করে বসে আছে। তাদের সাজা দেওয়াটা এখন আর কঠিন শুধু না, প্রায় অসম্ভবই। এর কারণ শুধু এই নয় যে, এতদিন পর তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করাটা কঠিন, বরং এইটা যে তাদের গায়ে হাত দিলে সেই হাত দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, এক অবিমিশ্র আনন্দ অনুভবের বোধ একে কখনওই বলা যাবে না, বস্তুত সেরকম বোধের অবকাশ কখনও ছিলই না। নিজেদের আশেপাশে খুনিদের নির্লজ্জভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখলে কোনও সমাজই আনন্দিত এবং নিরাপদ বোধ করতে পারে না।

 

The assassination of Indira Gandhi : Account of an eyewitness

Swaran Preet Singh is a Professor at Warwick Medical School, a Commissioner of the Equality and Human Rights Commission, UK, Honorary Consultant Psychiatrist at the Birmingham and Solihull Mental Health Foundation and Trust Hub Lead at the Mental Health Research Network Heart of England Hub. Having started training as a surgeon, Professor Singh became interested in mental health following involvement with human rights groups working with children traumatised by the ethnic violence in New Delhi. He trained as a psychiatrist and moved to the UK in 1991. His research has mainly been health services orientated, focussing on early psychosis, somatisation, and deliberate self-harm, cultural and ethnic factors in mental illness, mental health law, transitions and medical education.

It has been more than three decades now since 31 October 1984, the day Indira Gandhi was assassinated by her Sikh bodyguards. Few outside India know about the events leading up to her death. And fewer still know about the thousands who died in the following 72 hours. I was there.

I was a young trainee surgeon from a middle-class Delhi background, interested in rock and roll, beer and cricket. Punjab to the north was fractured by violence between Sikh militants and government forces. People like me, who argued that both sides were committing atrocities, were shouted down by a polarised society. I was frustrated and distressed, but life in Delhi carried on. All that changed at 9.20am on 31 October 1984.

That morning I walked into the ward and the normally deferential clerk snarled at me: “Tum haramzadoon ney maar diya madam ko” (“You bastards have killed madam.”).

I couldn’t comprehend his tone or the content of what he was saying. I turned to a nurse: “Did you hear that? He swore at me”. She said: “Haven’t you heard? Indira Gandhi has been shot by her Sikh bodyguards. She is being brought to AIIMS”.

AIIMS, the All India Institute of Medical Sciences, was our big neighbour and where the VIPs went. Our hospital served the poor, the dispossessed and those without political or economic clout. I rushed to AIIMS, which was already seething with a mass of humanity. People spoke in hushed whispers, the crowd swarmed anxiously, senior government figures arrived with blaring alarms, police and security guards were everywhere. There was an ominous foreboding in the humid air.

A colleague approached and whispered: “It is not safe for Sikhs. Please leave”. The gates were blocked by teeming crowds. As I squeezed my way through, someone shouted “you bastards” and a blow fell on my neck. I used to wear a turban then and it came off with that blow. Clutching my turban and crouching, I forced my way through as more blows rained down upon my back. I managed to stumble into an auto-rickshaw, pleading with the driver to take me away.

I wasn’t hurt, just badly shaken. The blows I received were a manifestation of grief turned into anger, and mourning expressed as assault. It was unfocused, not directed at me personally but at a Sikh who was somehow responsible for the death of Indira Gandhi, the country’s mother.

The killings started late that evening. National television had a continuous broadcast of footage of Indira Gandhi’s body, surrounded by crowds shouting “Khoon ka badla khoon” (“Seek blood for blood”). The Wikipedia entry for the riots states that the first Sikh was killed on 1 November 1984. I know of an elderly Sikh man who was killed on 31 October around 9 pm. Truth is hard to establish in a state of total anarchy.

“Khoon ka badla khoon” – on and on it went, repeated over and over again and broadcast to the nation. Rumour was rife; trains were arriving from Punjab with the Hindu passengers having all been killed by the Sikhs onboard; Sikhs were celebrating and distributing sweets; Sikhs had poisoned the water supply of Delhi.

Two police officers, from my local police station, went around our colony with a megaphone: “Don’t drink water. The Sikhs have poisoned it.” I challenged them: “Do you think taps know the religion of a household? Would Delhi Sikhs be able to avoid being poisoned? What nonsense is this?” One of them pushed me aside.

Our residential area had a large number of Sikh families and a dominant Hindu population. Elders from the Hindu and Sikh communities convened a meeting at the local temple. Our Hindu neighbours reassured us that they would protect us. Street patrols were formed and young people were placed on rooftops to look out for approaching mobs. We patrolled the area with whatever weapons we could find: hockey sticks, cricket bats, tennis rackets, axes, broomsticks. My father had a ceremonial Sikh sword, four feet long, but it was blunt and useless. I walked with it unsheathed, unsure whether I would have the nerve to ever use it. We could see fires raging in the distance. We heard that Sikhs were being killed in large numbers, but there was no way to find out.

I have never before or since experienced what we felt for the next three days: a sense of being hunted. I was the enemy in my own country; some of my own countrymen were looking for me and my family.

Unbeknown to us, mobs had been collected by senior members of the ruling Congress party. Electoral lists were distributed so Sikh households could be identified. The mobs, already suffused with anger, were plied with alcohol, paid a thousand rupees each, and given canisters of kerosene. The mob would surround a Sikh house and shout for all the males to step outside. The men would then have their legs broken before being doused with kerosene and set on fire, as the women and children watched. There was rape, there was looting but the primary aim of the mob was bloodlust: “Khoon ka badla khoon”.

The violence continued for three days. About 8,000 Sikhs were killed in North India, with more than 3,000 in Delhi. I was able to leave the area on the morning of 4 November, hiding in the back of a Hindu friend’s car. We went looking for a family we knew a few miles away but the streets were deserted and the family had fled. We found a badly burnt girl, she was around 15 and barely alive; we tried to get her admitted to a local hospital but the A&E consultant refused to admit her. We found a relief camp and left her there. To this day, I don’t know if she survived.

Several thousand of the widows and children from the carnage were rehoused in what is now known as the Widow Colony. A film is available that explores the widows’ stories. The women were in state of perpetual mourning, the children neglected and left to their own devices. All around they could see people who had killed their fathers, grandfathers, uncles and brothers; the killers safe in the knowledge that they were beyond the law.

Along with some friends, I started visiting the colony, initially just to play with the children and to give them some comfort. We met in a playground in a park. But the children, terrified of strangers, wouldn’t attend. So I offered to provide free medical care to all families who would send the children to the play area. Out went my surgical career, in came a weekly round of collecting medicine from friends and holding a makeshift clinic at weekends. When not gathering aid, I spent my time with a human rights organisation collecting evidence against the politicians who had led the killer mobs.

We worked with those families for about two years. Every official inquiry exonerated the perpetrators, dismissing robust evidence on the flimsiest of grounds. I decided to become a psychiatrist and moved to Chandigarh, the capital of Punjab. Here the cycle of violence between the Sikh militants and the government continued. I left India in 1990, disheartened and vowing never to return.

In 2014 I returned to the Widow Colony, along with a BBC documentary team to meet surviviors, especially adults who might have attended my clinic. I met one who recognised me, despite the startling change in my physical appearance over the intervening decades. What we found is a tale of sorrow, resilience and a sense of permanent defeat. I also found confirmation of two facts I have known for since 1984, but never found confirmation. A surgeon who had attended to Mrs Gandhi at AIIMS confirmed that in his own ward, staff had refused to admit injured Sikh during those days. And that some women had been raped; I met one of the rape victims. India has never fully even confronted the full horrors of those days. As to the survivors, on the surface many appear to have rebuilt their lives. But dig a little deeper and you discover lives haunted by the events of 1984. Many widows have died prematurely and many young men have drifted into alcohol, drugs, petty crime and, in some cases, have committed suicide.

When I came across the news of conviction of one of the culprits Sajjan Kumar, a part of me felt relieved. But another part of me felt that this is Justice so delayed, that it is actually justice denied. Part of me is glad that he has been convicted, but part of me feels pain realizing that there are still so many of them, these killers, roaming around freely and occupying high chairs in the governments and the society at large. It is perhaps difficult, or almost impossible now, to convict them. Not only because finding evidence against them is hugely difficult after so many years, but also for the fact that it would perhaps lead directly to some highest offices of the country. How can any society feel safe or be at ease if murderers live within it with impunity and impudence?

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...