কৌশিক লাহিড়ী
অশোক মিত্র লিখেছিলেন “ভক্তি এখন অসহিষ্ণুতার নামান্তর, সুকুমার রায়ের ‘তুমিও ভালো আমিও ভালো’-র দর্শনবৃত্তান্ত থেকে ছিটকে অনেকদূর সরে এসেছে আমাদের ভূমণ্ডল।”
যদিও ঈষৎ দীর্ঘ, তবুও ডঃ মিত্রের ‘পটভূমি’ গ্রন্থে সঙ্কলিত “ধূর্জটি, এই অবস্থায় একটু ইষ্টনাম করতে হয়”, প্রবন্ধ থেকে আংশিক উদ্ধৃত করলে, বোধকরি, সেটা আর যাই হোক, অপ্রাসঙ্গিক হবে না!
…১৯৬১ সালের গ্রীষ্মকাল, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কঠিন কর্কট পীড়াগ্রস্ত, আরোগ্যের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই… তাঁর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে গেছি… ধূর্জটিপ্রসাদ বিছানায় শায়িত, পীড়ার অসহ্য যন্ত্রণা, কখনও চেতনা ফিরছে, পরক্ষণে অচৈতন্যের ঘোর। যখন ঈষৎ জ্ঞানভাবে ফিরে আসছে, কষ্টে চোখ মেলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছেন, কোনও কিছু বলতে চাইছেন যেন, কিন্তু কণ্ঠনালীতে ভয়ঙ্কর রোগ বাসা বেঁধেছে, যা নির্গত হচ্ছে তা ফিশফাশ প্রেতস্বর… হঠাৎ সিঁড়ি ভেঙে হুড়মুড় করে দিলীপকুমার রায়। টকটকে গেরুয়া-লাল বসন, গেরুয়া-লাল নামাবলী, শরীর থলথলে কানে আদৌ শুনতে পান না… রোগাচ্ছন্ন, শয্যাশায়ী ধূর্জটিপ্রসাদকে ঐ অবস্থায় দেখে দিলীপকুমার রায় আবেগাকুল… ঝুঁকে পড়ে, গমগমে গলায়, ঘর কাঁপিয়ে উচ্চারণ : ‘ধূর্জটি, আমি মন্টু, তোমাকে দেখতে এসেছি।’ হয়তো, একটি চকিত মুহূর্তের জন্য, ধূর্জটিপ্রসাদ চিনতে পারলেন, পরক্ষণে চেতনা মিলিয়ে গেল, কয়েক মিনিট বাদে ফের হয়তো চোখ খুললেন, দিলীপকুমারকে স্তিমিত, দুর্বল দৃষ্টি দিয়ে খুঁজে বেড়ালেন… যে-চেয়ারটিতে বসে ছিলেন দিলীপকুমার, আরও একটু বিছানার কাছে টেনে নিয়ে এলেন, ধূর্জটিপ্রসাদের মুখের ওপর অনেকটা ঝুঁকে পড়ে, দিলীপকুমারের ব্যাকুল মিনতি : ‘ধূর্জটি, এই অবস্থায়, একটু ইষ্টনাম করতে হয়। ধূর্জটি, আমি উচ্চারণ করছি, আমার সঙ্গে একটু ইষ্টনাম করো।’
…নাস্তিক ধূর্জটিপ্রসাদ, সারা জীবন বুদ্ধির চর্চা করেছেন, যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ ক’রে ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন… সাধক দিলীপকুমার, পরমভক্ত দিলীপকুমার তাঁর কাছে সকাতর প্রার্থনা জানাচ্ছেন : ‘ধূর্জটি, আমি মন্টু, ধূর্জটি, এই সময়ে একটু ইষ্টনাম নিতে হয়, ধূর্জটি, ভাইটি আমার, সমস্বরে আমার সঙ্গে একটু ইষ্টনাম করো’।
কিন্তু না, যুক্তিবাদী ধূর্জটিপ্রসাদকে ঐ অবস্থাতেও টলানো সম্ভব হল না, বুদ্ধির বাইরে কোনও অতিপ্রাকৃত সর্বশক্তিমান উপস্থিতি নেই… দিলীপকুমার রায় ঝুঁকে পড়ে উচ্চারণ করে যাচ্ছেন, প্রায় আর্তনাদের মতো তাঁর সেই কাকুতি : ‘ধূর্জটি, একটু ইষ্টনাম করতে হয়।’ হঠাৎ, ধূর্জটিপ্রসাদ যেন বন্ধুকে উতোর শোনাচ্ছেন, সমস্ত রোগযন্ত্রণাকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ করে’ই যেন, ক্রমাগত ফিশফিশ উচ্চারণরত হলেন…
কানে একেবারে শুনতে পান না, বুঝতে পারছেন ধূর্জটিপ্রসাদ নামতা উচ্চারণের মতো একটা-কিছু বলছেন, আমার দিকে ফিরে বারবার দিলীপকুমারের সকাতর প্রশ্ন :
‘কী,কী বলছে ধূর্জটি, আপনি ওকে একটু ইষ্টনাম করতে বলুন না?’
একটি যুগলবন্দির ঘটনা যেন।
‘ধূর্জটি, এই অবস্থায়, একটু ইষ্টনাম শরণ করতে হয়’, সনম্র, ভক্তিসম্পৃক্ত অনুরোধ।
অন্যদিকে, কণ্ঠস্বর প্রায় নির্বাপিত, অবর্ণনীয় শারীরিক যন্ত্রণা, কিন্তু চেতনা ওই অবস্থাতেও তার যুক্তির গর্ব থেকে বিচ্যুত হতে গররাজি, অতএব বৈশাখের থমথমে সকালে ঘর কাঁপিয়ে গুঞ্জন ‘ঈশ্বর নেই, ঈশ্বর নেই, ঈশ্বর নেই…’
…এই এতগুলি বছর বাদে, দিলীপকুমার রায়ের ভক্তির ব্যাকুলতাকেও সম্মান, শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছে হয় আমার।
সেই ভক্তি এখন বর্বরতার কুম্ভীপাকে।
ঈশ্বরচেতনা আর আধ্যাত্মিকতা সমর্থক না হলেও, একটির সঙ্গে অন্যটি কিন্তু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত!
আবার আত্মানং বিদ্ধির ধারণাটাই কিন্তু আধ্যাত্মিকতার বীজ, মূল কথা!
তার থেকেই ডালপালা বিস্তার করে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ব্রহ্মচেতনা!
ছান্দোগ্য উপনিষদে (৩:১৪:১)— ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জ্বলানিতি’ অর্থাৎ সব কিছুই ব্রহ্ম, ব্রহ্মেই তাদের জন্ম, পুষ্টি এবং প্রলয়।
কঠ উপনিষদে (২:২:১২) আমরা পড়ি— ‘একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি’ অর্থাৎ একই ব্রহ্ম বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছেন এবং বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে প্রচ্ছন্নভাবে আছেন। বহুকে ব্যাপ্ত করেই তাঁর একত্ব।
কঠ উপনিষদে (২:২:৯) আরও বলা হয়েছে—
অগ্নির্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব।
একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ।।
অর্থাৎ একই অগ্নি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ হলেও অগ্নি বলেই তাকে আমরা চিনি। সেইরকম একই আত্মা বিভিন্ন জীবের রূপে প্রকট হয়েও তিনি তাদের অন্তরে প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজ করছেন। অর্থাৎ একই শক্তির বহুরূপে প্রকাশ ঘটছে এই বিশ্বে।
উপনিষদের সার শিক্ষা হল ব্রহ্মজ্ঞানী হও তবেই মুক্তি বা মোক্ষলাভ হবে।
‘আত্মানং বিদ্ধি’ এবং সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জ্বলানিতি’ এই কথাগুলো আবার একশো কুড়ি বছর আগে এক তরুণ সন্ন্যাসী সহজ কথায় বুঝিয়ে গেছেন, বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা তুমি খুঁজিছ ঈশ্বর!
এটা কি ঈশ্বরবোধ নয়?
তাঁর গুরু উচ্চারণ করেছিলেন, সরল অথচ বৈপ্লবিক একটি কথা, যত মত তত পথ!
সেটা কি ধর্মচেতনা নয়?
সমস্যাটা হল ব্যক্তিগত ঈশ্বরচেতনা আর ধর্মাধর্মবোধ যখন ব্যক্তি ছাড়িয়ে সমষ্টিতে পৌঁছায়!
মানুষের বানানো অর্গানাইজড ধর্মগুলি আসলে প্রাথমিকভাবে কিন্তু রাজনৈতিক দলই!
আর গীতার (১৮/৬৬) মূল বক্তব্যে না গিয়েও বলতে পারি, মনুষ্যসৃষ্ট সব ধর্মেরই মূল কথা হল—
সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ!
আমাদেরটাই সেরা, অতএব আমাদের শরণে এসো!
একেবারে আদিম রাজনৈতিক প্রচারের মূলকথা!
ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি আমাদের দেশ নাকি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র।
তা বড় হবার পরে এইসব শব্দগুলির অর্থই কেমন যেন গুলিয়ে যেতে লাগল।
কেউ শেখালেন ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, তো অন্য কেউ বোঝালেন, এর চেয়ে ইংরেজরা নাকি ঢের ভালো ছিল! স্বাধীনতা ধুয়ে কি জল খাব, ইত্যাদি।
গণতন্ত্রটা যে আদৌ ভালো জিনিস নয়, অশিক্ষিত মানুষ ভোটাধিকার পেলে যে এইরকমই হবে, সেটাও শুনলাম। আর মিলিটারি রুল যে এইসব জনগণ মার্কা ন্যাকামির চেয়ে অনেক গুণে ভালো সেটাও শুনলাম স্বতঃসিদ্ধ।
বাকি ছিল ওই ধর্মনিরপেক্ষ কথাটা। এখন তো দেখছি এর চেয়ে অশালীন কথা আর হয় না।
সেকুলার মানেই চোখ সরু করে, সিকুলার। মানেই অসুস্থ।
আমাদের সংবিধান প্রণেতারা, মানে যাঁরা এই শব্দটি আমাদের সংবিধানে লিখে গেছেন, তাঁরাও বোধকরি জড়বুদ্ধি অথবা মানসিক অসুস্থ ছিলেন।
আর আদর করে ‘সেকু’ বলেও ডাকা হয় সেকুলারদের। পুরো সংবিধানটাই সেকু কিনা কে জানে!
ধর্মনিরপেক্ষ শুধু বললে হয় না, চিবিয়ে চিবিয়ে গেরো! হবে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী!
যদিও আমি কখনও ধর্ম-নিরপেক্ষতার ধ্বজা দেখিনি। তার কী রং জানি না।
আর সেকুর সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি কথা মাকু! মানে মার্কসবাদী। মানে কম্যুনিস্ট। তারা নাকি গণতন্ত্র মানে না! কিন্তু তারাই নাকি আবার সেকু, মানে সেকুলার। মানে ধর্মনিরপেক্ষ!
কী গেরো!
আর যাঁরা ভয়ঙ্কর দেশভক্ত, সেনাভক্ত, সেনা শাসনের পক্ষপাতী, তাঁরাই নাকি গণতন্ত্রেরও পূজারি।
তা হবে। আমি কতটুকুই বা বুঝি।
আমাদের ছোটবেলায় আমরা intolerance কথাটা সেভাবে শুনিনি।
বিতর্কসভায় তুমুল দ্বৈরথের পর প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিজের সাইকেলের রডে বসিয়ে হোস্টেলে ফিরে এসেছি। এক ভাঁড়ের চা ভাগ করে খেয়েছি।
ইদানীং ব্যাপারটা অন্যরকম। বহুত্ববাদের পরিসরটা ক্রমাগত সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে!
হয় দেশভক্ত নয় দেশদ্রোহী, হয় নমো নয় রাগা, হয় তিনু নয় নাকু, হয় মাকু বা চাড্ডি গোছের শ্বাসরোধী অসহিষ্ণুতার মাঝে একটা প্রশ্ন ভারি বিব্রত করে।
দলহীন, ধর্মনিরপেক্ষ (কিন্তু ধ্বজাহীন), নাস্তিক, পরমতসহিষ্ণু, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশবাসীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে তো?
দ্বিমত হওয়ার?
সংবিধান যেমন রাষ্ট্রকে সার্বভৌমত্ব দিয়েছে, তেমনি নাগরিককেও তো দিয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা।
ধর্ম পালনের অধিকার, ধর্ম না-পালনের অধিকার!
এই ধর্ম না-পালনের অধিকারকে কিন্তু অধর্ম পালনের অধিকারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না!
আর, নাস্তিক মানেই অ-বিশ্বাসী এটা অত্যন্ত সংকীর্ণ আর গতানুগতিক চিন্তাধারা।
আমি একজন নাস্তিক। আমি কোনও অতিপ্রাকৃত ঈশ্বর অথবা বিচ্ছেদ-প্রসূ, ঘৃণা-প্রসারী বানানো ধর্মে বিশ্বাস করি না।
আমি প্রচলিত ধর্ম-বিরোধী। কিন্ত ধর্ম-হীন নই।
সত্যজিৎ রায়ের আগন্তুক ছবিতে মনমোহন মিত্র বলেছিলেন—
যে জিনিস মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, আমি তা মানি না, রিলিজিয়ন এটা করেই, আর অরগানাইজড রিলিজিয়ন তো বটেই। সেই একই কারণে আমি জাতও মানি না।
আমি বিশ্বাস করি মানবধর্মে। একমাত্র ধর্ম, মানবধর্ম।
মনে রাখতে হবে মরালিটির মধ্যেও একটা স্পিরিচুয়ালিটি থাকতে পারে, আর স্পিরিচুয়ালিটি মানেই রিলিজিয়ান নয়!
মৌলবাদী সব ধর্মেই আছে। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ।
কিন্তু উত্তরণের প্রয়োজনে এই মৌলবাদকে পরাভূত করতে হবে, যুক্তি দিয়ে, ভালোবেসে, কথা বলে, লিখে।
এক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়তে নয়া মৌলবাদকে আবাহন না করি, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন তো?
গোঁড়ামিটাই খারাপ। তা সেটা গোঁড়া কোরানপন্থী, গীতাপন্থী, গ্রন্থসাহেবপন্থী, বাইবেলপন্থী, দাস ক্যাপিটাল পন্থী এমনকি কথাঞ্জলিপন্থী যাই হোক না কেন।
ধর্মান্ধতা একটি মস্তিষ্কের অসুখ। স্নায়ুবৈকল্য।
খুব সহজ ভাষায় আমাদের রবি ঠাকুর সেই কবে এ কথা গুলি লিখে গেছেন।
ধর্মবুদ্ধি মানুষের যত অনিষ্ট করেছে এমন বিষয়বুদ্ধি করেনি। বিষয়াসক্তির মোহে মানুষ যত অন্যায়ী যত নিষ্ঠুর হয়, ধর্মমতে আসক্তি থেকে মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি ন্যায়ভ্রষ্ট অন্ধ ও হিংস্র হয়ে ওঠে, ইতিহাসে তার ধারাবাহিক প্রমাণ আছে; আর তার সর্বনেশে প্রমাণ ভারতবর্ষে আমাদের ঘরের কাছে প্রতিদিন যত পেয়ে থাকি এমন আর-কোথাও নয়।
দেখা যাক গতবছরের ডাক্তারি জার্নাল Neuropsychologia-র Volume 100, June 2017, পৃষ্ঠা ১৮-২৫। এইবার প্রমাণিত হল সেই মস্তিষ্কের অসুখ।
আর প্রকাশিত হবার বেশ কয়েকমাস পর এইবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল সেই বিস্ফোরক খবর।
অসাধারণত্ব আমার ঈশ্বর।
আমি ঈশ্বরকে উপলব্ধি করি, রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ বা বুদ্ধদেবের লেখায়, ভিনসেন্ট, মোনেত, রামকিংকর বা হুসেইনের রেখায়, ভীমসেন, বিটোভেন, বিসমিল্লাহ খান বা নিখিল ব্যানার্জির সঙ্গীতে, আনা পাভলোভা, বালা সরস্বতীর বিভঙ্গে, ক্ষুদিরাম, ভগত সিংহের শৌর্যে, আনন্দীগোপাল, রামানুজনের সংগ্রামে, কুরী দম্পতির উদ্ভাসিত উদ্ভাবনে।
শ্বেতি-সেরে-যাওয়া-কিশোরীর বাবার চোখের কোণার কৃতজ্ঞতা মেশা আনন্দাশ্রুতে প্রতিফলিত, প্রতিসৃত হয়ে ঝলসে ওঠে দ্যুতিময় ঈশ্বরসত্তা।
আমি আমর্ম নাস্তিক থেকে যাই।
অ-বিশ্বাসী হতে পারি না।
এত গভীর জটিল ও কিছুটা ব্যক্তিগত লেখা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা নেই তাই এই সুযোগে নিজের দু একটা কথা লিখে যাই|
ধর্মীয় মৌলবাদ এর একটা রকমফের হল নাস্তিকতার মৌলবাদ| আর সব মৌলবাদের মতোই ওই নাস্তিকতার মৌলবাদ ও দিনের শেষে ভয়ানক আগ্রাসী ভাবে অসহিষ্ণু| সে আস্তিক কোনো মানুষ কে মানুষ বলেই মনে করে না| এখানেই আমার আপত্তি|
প্রতিবেশী কে ভালোবাসো এই কথাটার মানে টা আমার কাছে স্পষ্ট| নিজের পরিবার পরিজনের গন্ডি ছাড়িযে সব মানুষকে ভালোবাসতে চাই| তাদের ভালো তে বসবাস করতে চাই| স্রেফ নিজের কিছু ছোট বা বড় ভালোলাগার ও ভালোথাকার জন্য তাদের কোনো ক্ষতি করতে চাই না|
কৌশিক এর অনবদ্য লেখাটির জন্য তাকে একটু বেশি ভালোবাসতে চাই|
চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম এ এই লেখার মতো আরো অনেক লেখা নিয়ে গাড়ি দাঁড়াক
আমি তোমাকে আঘাত করি না ধর্ম।
নিশিদিন ভয়ে ভয়ে থাকি।
আমাকে দয়া করো, বাঁচিয়ে রাখো।
তুমি কি জানো না,
এই বেঁচে থাকাটাই, বাঁচতে চাওয়াটাই ধর্ম আমার?
তোমার আদেশে
ক্রুসেডে গেছি, কাফেরকে মেরেছি
ধর্মযুদ্ধে খুন করেছি অজস্র জ্ঞাতিভাইকে
একলা নির্জন ঈশ্বর
বহুমূর্তিধারী দেবতা মায়
পাথর প্রতিম প্রতীক
সবার কাছে গেছি হামাগুড়ি দিয়ে
পুব পশ্চিম উত্তরে দক্ষিণে মুখ করে দাঁড়িয়েছি
ফুল ছুঁড়েছি, পাথরও
যখন যেমন হুকুম করেছ
বাঁচতে চেয়েও আমরা মরে গেছি
শরীরে সংস্কৃতিতে মেধায়
সবাই বারবার
শুধু তুমি একা
ডায়নোসরের প্রতিভায় বেঁচে আছ
একে অন্যকে তাড়া করে, ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে
আমাকেও বাঁচতে দাও ধর্ম
আমি অনন্তযৌবনা হুরি কিম্বা অপ্সরা চাইনি
ইহলোকেই ঝলসে যেতে চাই
আমার সন্তানের জননীর আঁচে
কোনওক্রমে প্রাণ খুঁজে পাওয়া
এই দুঃখী নোনাজলের গ্রহে
আসলে এই বাঁচতে চাওয়াটাই
একমাত্র ধর্ম যে আমার
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটি ।