লাজবন্তী খান গুপ্তা
রচনাটি লেখিকার ‘অনুরাগমালা’ বইয়ের কিছু অংশ। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের জন্য লেখিকারই চয়ন করে দেওয়া। মূল ইংরাজি লেখার নিচে দেওয়া হল।
এক রাতে বাবার কাছটিতে বসে পায়ে মালিশ করে দিতে দিতে এমন একটা কথা বললাম যেটা সেই সময়ে আমার বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিল। বাবার উত্তর ছিল খুবই সাদামাটা। কোনও উপদেশ-টেশ কিচ্ছু নয়। সাধারণ উদাহরণ, এমন একটা ভাব নিয়ে বলা— যেটা আয়ত্ত করতে গেলে এমন কিছু মানুষের সঙ্গ করতে হয় যাঁদের জীবনে সুর আর লয় হারানোর ভয় ছাড়া আর কোনও ভয় নেই। যাঁদের মূল লক্ষ্য কেবল বিশুদ্ধতম ধ্বনির অন্বেষণ, যে ধ্বনিকে অন্তরে ধারণ করেছে সঙ্গীত।
এমন একটা পরিবৃত্তের মধ্যে জন্ম নেওয়া আর বড় হয়ে ওঠার বাড়তি সুবিধা এটাই। এই বাড়তি সুবিধার মধ্যে পবিত্রতা আর তাকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলার চেষ্টা আছে— অধিকারবোধ নেই। আর যে পরিবৃত্তের কথা বললাম, সে নিজেই তো দু’হাত বাড়িয়ে সমস্ত শ্রোতা আর শিক্ষার্থীকে কাছে টেনে নিয়েছে।
এই বিশুদ্ধ ধ্বনির সাধনায় বাবা আলাউদ্দিন খান, আমাদের দাদু, বহু কষ্ট স্বীকার করেছেন। তবু প্রতিটা বিপত্তির সামনেই তিনি ছিলেন অবিচল, অকুতোভয়। দাদু যখন মাইহারে বাস করতে এলেন, তখন বেশ কিছুটা বয়েস হয়েছে তাঁর। হয়তো সেই কারণেই যা কিছু জানেন তাঁর সবটুকু ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে যাবার ব্যস্ততা। ‘হিম্মতে মরদাঁ, মদদে খুদা’— এই লব্জ মনে মনে আউড়ে যেতেন দাদু। ঈশ্বর সাহসীর সহায়ক। প্রয়োজনে প্রচণ্ড কঠোর হতে পারতেন। লাঠি নিয়ে বাবাকে তাড়া করেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে। তবু তিনি শিষ্যদের মধ্যে তাদের গুরুর অন্তরস্থ সম্পদের প্রতি এমন তৃষ্ণা তৈরি করতে পেরেছিলেন, যে সেই সম্পদ আহরণের জন্য একনিষ্ঠ সাধনার তাগিদে তাদের ভয় দূর হয়ে যেত।
পিসিমা জাহানারার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর দাদু, বাবা আলাউদ্দিন খান, অন্নপূর্ণা পিসিমাকে সাঙ্গীতিক শিক্ষাদানের থেকে সরে আসেন। তবু পূতপবিত্র সঙ্গীতের মধ্যে থাকতে-থাকতে, মাতৃজঠরে শ্রবণশক্তির বিকাশের সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, সূক্ষ্ম কারুকাজ ধরে রাখতে শুরু করে শিশুর কান। বোধহয় এভাবেই পিসিমার শিক্ষারম্ভ হল— শুনে আর নিজের ভিতরে ধারণ করে রাখতে-রাখতে সেই সঙ্গীত, যা কালক্রমে হয়ে উঠবে একাধারে তাঁর অস্তিত্ব ও জীবনের চলার পথ। পিসিমার গান শুনে, আর দাদার রেওয়াজে ভুল হলে শুধরে দেওয়া দেখে মুগ্ধ হয়ে দাদু পিসিমাকে শেখাতে আরম্ভ করেন।
আমার দশা ছিল প্রাচীরগাত্রে মক্ষিকাটির মতো— অনেক উস্তাদের সঙ্গীত শোনা, তাঁদের হয়ে-ওঠা দেখা। শুধু মাইহারের গুরুধাম মদিনা ভবনেই নয়। মুম্বাই, কলকাতা ছাড়িয়ে, সাগর পেরিয়ে সুদূর অ্যামেরিকাতেও।
গোড়ার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আমি স্লেট আর চক নিয়ে কোথাও একটা বসে ব্যস্তসমস্ত হয়ে আঁকিবুঁকি কাটতাম। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাটার যত শব্দ-সুর-ছবি তার কোনওটাই আমার কান বা চোখ এড়িয়ে যেত না। একটু রাতের দিকে শুনতে পেতাম— দাদু হয়ত রেওয়াজ করছেন, বা ওই বাড়ির অসংখ্য ঘরের মধ্যে কোনও একটা ঘরে ঢুকে পড়ে দেখছেন তাঁর কোনও শিষ্যের রেওয়াজ— যন্ত্রের নিচে একটা কাপড় রেখে— যাতে যন্ত্রের বাজনা কেবল তারই কানে পৌঁছয়।
দাদুর শিষ্যেরা সবসময়েই কিছু-না-কিছু নিয়ে থাকতেন। প্রায় তাঁদের গুরুর মতোই। প্রায় বলছি, কারণ দাদু তো শুধুই গুরু ছিলেন না। তিনি ছিলেন একাধারে গৃহস্থ, কৃষক, বাগানের মালি, পূজারী, রাজমিস্ত্রি, রঙমিস্ত্রি— আর সবকিছুরও পর তাঁর ছিল কড়া নজর।
দাদুর শিষ্যেরা— তখন প্রায় সকলেই তরুণ, যেমন নিখিলকাকু, বাহাদুরকাকু, ইন্দ্রনীলদা, বসন্তদা, এঁদের সঙ্গে বাবাও (কখনও-সখনও পিসোমশাই পণ্ডিত রবিশঙ্করজি)— দাদু একটু চোখের আড়াল হলেই সাধনার থেকে ছুটি নিয়ে হাসি-মস্করা করতেন, বা হয়ত একটু চা খেতেন। অবশ্যই দাদুর ফেরার দিকে নজর রেখে এইসব চলত, আর দাদু ফিরছেন জানতে পারলেই আবার তেড়েফুঁড়ে রেওয়াজ শুরু। দাদুর গতিবিধির ওপর নজর রাখার কাজটা অনেক সময়েই আমাকে করতে হত। বারান্দার পাশের কুলগাছটার আড়ালে বসে আমি সদর দরজার দিকে নজর রাখতাম। দূর থেকে দাদুকে দেখতে পেলেই ‘কাকু, কাকু’ রব তুলে সকলকে সাবধান করতাম, আর সঙ্গে-সঙ্গে ভিতরমহলে নেমে আসত নিস্তব্ধতা।
এইরকম কোনও কোনও বিরতির সময় বসন্ত রাইদা (অমন লম্বা বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর নখ আমি আর কখনও দেখিনি) মোটা কার্ডপেপারের ওপর নখ দিয়ে ছবি ফুটিয়ে তুলতেন। অসামান্য সুন্দর সব ছবি।
অন্নপূর্ণা পিসিমা ছিলেন সকলের থেকে আলাদা। নিজের ‘অবাধ্য’ গুরুভাইদের তিরস্কার করতেন, কিন্তু মুখে লেগে থাকত একটা দুষ্টু হাসি। আশিসদা, শুভদাদা, মেজদা–এঁরা সকলেই একবাক্যে পিসিমার কথা মানতেন বটে, কিন্তু ওঁর বড় দাদা, মানে আমার বাবা, ক্রমাগত পিসিমাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতেন, এবং শেষকালে হাসিয়েই ছাড়তেন। অবশ্য সকলের সঙ্গে মজা বা হাসাহাসি করতে, পুকুরে ঝাঁপাতে, মা শারদার টিলায় চড়তে বা রান্নার কাজে ননদদের সাহায্য করতে পিসিমা ছিলেন সবসময় তৈরি। কিন্তু পড়াশোনা বা রেওয়াজের সময় পিসিমার অন্য মূর্তি। পিসিমা তাঁর ছোট্ট শরীরটা নিয়ে আমাদের সকলের আগে-আগে ছুটছেন, আর তাঁর লম্বা কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে— এই দৃশ্য আমি কোনওদিনই ভুলতে পারব না।
প্রতি শীতে অবশ্যম্ভাবীভাবে আমাদের সকলকে নিজের নীল স্টুডিবেকারে ঠুসে নিয়ে বাবা চলতেন মুম্বাই থেকে মাইহার— নিজে ড্রাইভ করে। পথে, কোনও না কোনও গ্রামের ডাকবাংলোতে— তখন গ্রামে-গ্রামে প্রচুর ডাকবাংলো থাকত— রাত কাটিয়ে জঙ্গলের এবড়ো-খেবড়ো রুক্ষ রাস্তা পেরিয়ে তারপর মাইহার পৌঁছনো। যেতে-যেতে কখনও খুব কাছের থেকে ভেসে-আসা বাঘের গর্জন শোনা, কখনও বা গাড়ি থামিয়ে নীলগাইয়ের পালকে রাস্তা করে দেওয়া। অন্ধকারে ওদের চোখ জ্বলছে, আর কেউ-কেউ তাকিয়ে আছে আমাদের গাড়ির দিকে। মুগ্ধ হয়ে দেখার মতন।
গুরুঘর
পিসিমার পুরনো সাধনাকক্ষ
দাদুর বাড়িতে অজস্র মজা ছিল। বাড়ির কাছেই ছিল একটা তাঁবু খাটানো সিনেমা হাউস। সেখানে গ্রামোফোনে বাজানো হত ফিল্মের গান। সেই গ্রামোফোনের দম ফুরলে, যেমন মাঝে-মাঝেই হত, গানের বদলে উদ্ভট শব্দ বেরোত। সেই শুনে ভীষণ মজার মজার কথা বলতেন দাদু, আর আমরা ছোটরা হেসে কুটি কুটি হতাম। মাঝেমধ্যে কাগজ কেটে সুন্দর-সুন্দর নকশা বানিয়ে আমাদের দিতেন। দুপুরের খাবার সময়টা ছিল উৎসবের মতো। সকলের একসঙ্গে বসা, একসঙ্গে খাওয়া, আর মজার মজার গল্পে হেসে লুটিয়ে পড়া। রেওয়াজ বা শিক্ষার কড়া বাঁধন এই সময়টায় একেবারেই থাকত না। খাবার পর একটু বিশ্রাম, তারপরেই দাদুর শিষ্যেরা আবার লেগে পড়তেন নাদব্রহ্মের আরাধনায়।
অন্নপূর্ণা পিসিমা কখনও আসতেন ওঁর একমাত্র ছেলে শুভদাদাকে নিয়ে, কখনও পণ্ডিত রবিশঙ্করজির সঙ্গে। পণ্ডিতজি সঙ্গে আনতেন ওঁর ভাইদের, লক্ষ্মীশঙ্কর আন্টি আর ওঁর কন্যা ভিজিকে। পিসিমা যখন কলকাতায় থাকতেন, শিক্ষা দিতেন বাবার কলেজে। ওঁর গানের গলা ছিল মনোমুগ্ধকর। আমার মা ওঁর কণ্ঠকে বলতেন যেন ‘কথা-বলা বাঁশি’। পিসিমা কথা বললেই মা বলতেন— ‘বাঁসুরি বোল রহি হ্যায়’। এ-কথা শুনলেই পিসিমা লজ্জায় রাঙা হয়ে হেসে মা-কে একটা কথাই বলতেন— ‘ভাবিজি’।
পণ্ডিত রবিশঙ্করজি বম্বেবাসী হয়ে পাভলোভাতে বাড়ি নিলে আমরা সকলে যেন একটাই সুখী সংসারের অংশ হয়ে গেলাম। আমার মায়ের রাখিভাই ছিলেন পণ্ডিতজি। সেই সুবাদে তিনি মাঝে-মাঝেই আমাদের বাড়িতে আসতেন। একবার তো মা-কে এক রাঁধুনেই জোগাড় করে দিলেন তিনি। গুজরাতের মানুষ, তার নাম ছিল ছোটু। সে ছিল আমাদের চোখের মণি। একের পর এক সঙ্গীতের আসর থাকত বলে মনে হত যেন সারাক্ষণই উৎসবের মধ্যে আছি। প্রতিটি আসরেই পিসিমা যেতেন। আমরা সকলে একসঙ্গে বসতাম। কোনও ফটোগ্রাফার ছবি নিতে এলে নিজের পার্সে মুখ ঢাকার চেষ্টা করতেন পিসিমা। কেন যে উনি ক্যামেরা এড়িয়ে চলতেন জানি না, কিন্তু এ-ব্যাপারে উনি খুবই অনমনীয় ছিলেন। মিষ্টি হেসে ঠিকই মুখ ঢাকতেন নিজের পার্সে। বাবার বন্ধু শেলিকাকু (শৈলেন্দ্র মজুমদার) অবশ্য সুযোগ বুঝে কিছু ছবি তুলে নিয়েছিলেন। তার তিনটে আমার কাছে আছে। একটাতে দেখছি উনি মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন।
আমাদের পারিবারিক চৌহদ্দির মধ্যে শুভদাদা আর আমার মামা— চান্দামামা— ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছিলেন। আমি মামার ন্যাওটা ছিলাম বলে আমরা একসঙ্গেই ঘুরতাম— আমাদের বাড়ি পুনিতা-য়, বা পাভলোভায়। ফিল্ম দেখতে পিসিমা ভালোবাসতেন। আমরাও, বিশেষ করে কমেডি। সুতরাং প্রতি সপ্তাহান্তেই ফিল্ম দেখতে যাওয়া হত। হাসিঠাট্টা। পট্যাটো চিপ্স ভাগ করে খাওয়া। এ-সবের মধ্যে আমরা জানতেই পারিনি কীভাবে একটু-একটু করে বদলে যাচ্ছে পিসিমার জীবন। খুব সুন্দর একটা ডাখ্শুন্ড পুষলেন পিসিমা। নাম দিলেন ‘মুন্না’। এমনকী গানও শেখাতে শুরু করলেন তাকে। হাতে গোনা যে-কজন পিসিমার আদরের ভাগ পেত, তার মধ্যে মুন্নাও ছিল। আমাদের প্রত্যেকের ওপর— বিশেষ করে শুভদাদার— যেমন নজর রাখতেন, তেমন রাখতেন মুন্নার ওপরেও।
ওঁর জীবনে পরিবর্তনের মূলে সম্ভবত ছিল দেশে ও বিদেশে বেড়ে-চলা খ্যাতি, আর এমন আরও কিছু যা ওঁর মন ভেঙে দিয়েছিল। পিসিমার চোখে জল দেখে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। মা-কে আঁকড়ে ধরেছিলেন পিসিমা। মা-ও তাঁর ননদের কষ্টের কথা বলতেন তাঁর রাখিভাইকে। সবকিছুর ফলে সকলের অগোচরে ত্বরান্বিত হচ্ছিল ওঁদের দুজনের সম্পর্কের ক্ষয়।
ওঁরা এরপর চলে গেলেন আকাশগঙ্গা-য়। পিসিমা নিলেন এন.সি.পি.এ-তে শিক্ষকতার কাজ। ওঁকে শেখাতে দেখাটা ছিল তৃপ্তির— কী বাড়িতে, কী এন.সি.পি.এ-তে। দাদুও চলে গেলেন এরপর। মুন্না, পিসিমার সেই গায়ক ডাখ্শুন্ড-ও মারা গেল। শুভদাদা ওঁর বাবার সঙ্গে চলে গেলেন অ্যামেরিকায়। কয়েকবছর পর এক সুন্দরী অ্যামেরিকানকে বিয়ে করলেন। পণ্ডিতজি আর পিসিমার বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হল।
পিসিমা নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। নিজের সঙ্গীতসাধনার মধ্যে, শিষ্যদের মধ্যে, আর সেইসব পায়রাদের মধ্যে, যারা প্রতিদিন এই সার্থকনাম্নীর হাত থেকে খাবে বলে ফিরে-ফিরে আসত। ওঁর শিষ্যশিষ্যারা, আর যারা ওঁর সঙ্গে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে দেখা করতে আসতেন, তাঁরাও ওঁর তৈরি খাবার বা মিষ্টি মুখে না-দিয়ে ফিরতেন না। ওঁকে মাইহার, কলকাতা বা অ্যামেরিকায় নিয়ে আসার চেষ্টা বাবা অনেক করেছেন। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই ওঁর উত্তর হত— “…পায়রাগুলোকে খাবার দেবে কে?”
পিসিমার কথা বলতে বসলেই বাবার মুখে দুঃখ, বিষণ্ণতা আর গাঢ়তম ভালবাসা-মেশানো একটা ভাব ফুটে উঠতে দেখতাম।
রুশি আঙ্কল
এরপর পিসিমার জীবনে একটা আনন্দের বাঁকও এল। রুশি আঙ্কল (শ্রী রুশি কুমার পান্ডিয়া) এলেন। পিসিমাকে দেওয়া তাঁর বিবাহপ্রস্তাব (পিসিমা আঙ্কল-এর থেকে বয়সে অনেকটা বড় ছিলেন) নিয়ে আমাদের পরিবারে একটা ছোটখাট অশান্তিও হয়ে গেল। পণ্ডিত রবিশঙ্করজিও বেশ ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। পিসিমা রুশি আঙ্কলকে বিয়ে করলেন। আঙ্কল পিসিমাকে প্রায় পুজো করতেন আর তুলোয় মুড়ে রাখতেন বলা চলে। সারাদিনের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে, অসুস্থ হয়ে মায়ের শুশ্রূষা দিয়ে পিসিমাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখতেন আমাদের রুশি আঙ্কল। আঙ্কলকে আমরা খুবই পছন্দ করতাম, ভালবাসতাম। সদাহাস্যময় মানুষ ছিলেন।
আঙ্কলও চলে যাবার পর শোকে মূহ্যমান হয়ে ভাবতাম— “মা সারদা সরস্বতী কি তাঁর যোগ্যতম পূজারীদের নিয়ে এতটাই অধিকারপ্রবণ, যে কারও সঙ্গে তাঁদের ভাগ করে নিতে চান না?”
একেবারে না-জানিয়ে বুকে অনেক সাহস সঞ্চয় করে শেষবার যখন পিসিমার সঙ্গে দেখা করতে গেছি, আমার দেখা করার উদ্দেশ্য শুনে উনি মৃদু হাসিতে উজ্জ্বল হলেন। চাইছিলাম— মাইহারে আমাদের গুরুধাম মদিনা ভবনকে আমাদের রামপুর মাইহার সেনিয়া ঘরানার একটা পুরোদস্তুর সংগ্রহশালা তথা শিক্ষালয়ের রূপ দিতে। পিসিমার শেষ কথাক’টা ছিল— “তোমার আশিসদা তোমায় সাহায্য করবে। আর এ-ছাড়া এখানে তোমার নিত্যানন্দভাইয়া আছে। তোমার দাদু আমায় যা শিখিয়েছিলেন তার সবটাই আমি ওকে শিখিয়েছি। আশির্বাদ নিও।”
Maa Annapurna Pishima : Story of an Intrepid Worshipper of Music
One night, as I sat massaging my father’s feet, I spoke of something that caused me some anxiety. His answer was typical. No head on advice about it. Just an example and an attitude that needed cultivation with the living example of people who feared nothing but loss of pitch or beat; whose mainstay was pursuit of the purest sounds wrapped in the most exquisite melodies.
The privilege of being born and raised within this circle, remains exactly that – a privilege, sacred and sacrosanct – sans ‘entitlement’ – the circle itself inclusive and open to all listeners and learners, everywhere.
Baba Allauddin Khan, our grandfather had known incalculable hardships in his pursuit of pure sound. He remained fearless and unfazed by every set back. By the time he settled in Maihar, he was aging and this made him impatient to give all he knew to each of his students. And the constant riff one heard him vocalize was “Himmate Mardaan, Madade Khuda” which means Goodness encourages the courageous. Oh! He could be harsh, and would not hesitate to take a stick to my father, but he imbued in each of his disciples such a thirst for his treasures that fear fled in the face of their rapt intent.
The tragic death of Pishima Jahanara caused our Dadu, Baba Allauddin Khan to refrain from teaching Annapoorna Pishima. But little ears, surrounded by sacred sound as soon as the sense of hearing begins in the mother’s womb, pick up every detail, every nuance. And Pishima learned – listening and absorbing the sounds that would embrace her being and her life journey. Her father took to teaching her after being deeply moved by hearing her sing and correct her older brother as he practiced.
My own destiny has been that of a fly on the wall –listening to and watching the lives of several maestros unfold – there in that beloved Gurudhaam of Madina Bhavan, Maihar, and beyond – in Mumbai, in Kolkata and way beyond our shores – in the United States.
In those earliest days, I would be sitting somewhere with a slate and chalk, scribbling furiously, but with ears and eyes picking the sights and sounds of this space that hummed on and on from dawn thru dusk. Late night, one could also hear Dadu practicing in his room or wander into one of many, many, rooms to find disciples practicing away with a piece of cloth around the bottom panel of strings so that only they could hear what was played.
They were forever doing something – almost like their mentor, but not quite, because Dadu Baba Allauddin Khan wasn’t just the mentor, he was householder, farmer, gardener, worshipper, builder, painter and constant monitor of all his charges.
The disciples, mostly young men – Nikhil Kaku, Bahadur Kaku, Indranil Da, Vasant Da, led by Baba (and sometimes also Pishomoshai Pandit Ravi Shankarji) could use his short absences as breaks to share a laugh or a cup of tea, but as soon as he was espied approaching home, they were back to practicing furiously. I should know; I was often made the look out, hidden behind the branches of the Ber tree on the terrace facing the main gate of the house. As soon as I saw Dadu approaching, I would shout “Kaku, Kaku” and hushed order would descend in the inner courtyard.
During some breaks, Vasant Rai Da (who had the longest thumb and forefinger nails I had ever seen) would use those same nails to create embossed drawings on thick card paper. They were beautiful.
Annapoorna Pishima was different – she would admonish her errant gurubhais with a mischievous grin on her face. Aashish Da, Shubho Dada and Mez Da would pay immediate heed as would all the disciples except her beloved older brother – my Baba, who would tease her and get her laughing. She was ever ready for a laugh, a run to the pond or Ma Sharada’s hill and always there to help her sisters in law in the kitchen. But her bearing changed when she practiced or studied. I can never ever forget her running, long black hair flying in the wind as her slim frame shot forward with the rest of us left trailing.
Almost every winter, without let up, Baba would pack us up in his pale blue Studebaker and drive all the way from Mumbai to Maihar. We would spend a night at one of several Dak Bungalows that dotted our countryside then and then go forward thru the rugged, bumpy forest terrain that led to Maihar. One could hear the roar of tigers close by or have a horde of Nilgai (a kind of antelope) crossing our path, making Baba slow down to a stop. Their eyes shone in the dark and some would stop to stare at the car. It was fascinating.
Dadu’s home had its absolute fun moments. There used to be a Tent Cinema theatre close by and a gramophone would be cranking songs from films, but as soon as it ran out ofdrive, the sound would turn grotesque. It drew hilarious comments from Dadu that would have us kids laughing. Sometimes, he would make beautiful paper cut outs and give them to us. Lunch times were like festivals. We all sat together, ate together and shared laughter at his hilarious stories. The usual concentrate of practice was put aside for the while we ate. His disciples enjoyed a short while relaxing afterwards, and then back again to the sacred hum of Naad Brahma.
Annapoorna Pishima visited, sometimes with Shubho Dada (her only son) and sometimes with Pandit RaviShankarji who also brought along his brothers, Laksmi Shankar Aunty, her daughter Viji. In Kolkata, while Pishima lived there, she taught at Baba’s college and the sound of her singing voice was enchanting. My mother used to describe her voice as ‘the speaking flute’. Every time Pishima spoke, she would say “Bansuri bolrahihai” causing Pishima to blush, laugh and protest with one word “Bhabhiji”.
When Pandit Ravi Shankar moved to Bombay and set up house in Pavlova, we were one happy family. As my mother’s Rakhi brother, he would be a constant visitor to our home and at one point, even found Ma a cook – Chhotu, from Gujarat, who was our treasure. There were constant concerts that brought a frequent festive feeling to our days. Pishima would be there at all of them and we would sit together, she hiding behind her clutch purse anytime a photographer got close. I don’t know why she avoided the camera, but she did, firmly, politely with her ready laugh and her clutch to hide behind. Baba’s best friend Shelly (Sailendra Majumdar) Kaku was sneaky enough to click a few sometimes, and here are three of the ones he clicked. In one, it’s obvious she’s trying to escape his lens.
There in the glowing warmth of our shared spaces, Shubho Dada and my maternal uncle Chanda Mama became firm friends. And since I was inseparable from my Chanda Mama, we hung out together – at Punita (our home) or Pavlova. Pishima loved going to the movies and we all shared a penchant for comedy, so weekends would be spent at the cinema theatre, sharing laughter and potato chips. Unbeknownst to us, however, things were changing in her life. She got herself a beautiful dachshund, named him “Munna” and even taught him to sing. He was the closest she came to cuddle anyone, and she watched over him exactly as she would any of us – especially Shubho Dada.
These changes were, I believe, a throwback of growing fame – both at home and abroad, and of something else that broke Pishima’s heart. Seeing her in tears was devastating. She hung close to my Ma and Ma would often talk to her rakhi brother about her troubled sister in law, which led to the creation of politely fraying distances between them.
They moved to Aakash Ganga. Pishima took up a job teaching at NCPA and it was heartening to watch her teach, both at home and at the NCPA. Dadu passed away. Munna, the singing dachshund passed away, Shubho Dada moved to the US with his father, and married a lovely American a couple of years later. The break between Panditji and Pishima was complete.
She withdrew into herself. Into her music, her disciples and the pigeons that came by to be fed by this quiet giver of plenty. Her disciples and all those who managed permission to visit her on prescribed days left without her homecooked meals and sweets. Baba tried, in vain, to invite her to Maihar, to Kolkata, to the US – her reason for not going remained “… and who will feed my pigeons?”
Whenever Baba recounted this story, his expression was a mix of ruefulness, sadness and the absolute love he had for his little sister.
But then came a happy turning point. Rooshi uncle (Shri Rooshi Kumar Pandya) stepped in and his proposal of marriage to Pishima (many years older than him) created a minor furor within the family and got even Pandit Ravi Shankarji furious. Pishima married Rooshi uncle who worshipped her and kept her wrapped in cotton wool and laughter, serving her night and day and watching over her like a mother when she fell ill. We loved Rooshi uncle; always there, always laughing with that way he had of throwing back his head to let out gut laughter.
When he passed away, suddenly, wrapped in grief one wondered, “Is Ma Sharada Saraswati so possessive of her truest worshippers, that she will not share them with anyone?”
During my last visit with her, unannounced and fiercely fearless, she smiled at the intent that keeps me going – the desire to make our Gurudhaam – Madina Bhavan in Maihar – a full fledged conservatory/school of the music of our Rampur Maihar Seniya Gharana. Her last words to me were, “You have your Aashish Da to help you. And here, you also have your Nityanand Bhaiya. I have taught him everything your Dadu taught me. Aashirbaad niyo”.
(excerpts from my book Anuraagmala for Chaar Number Platform )