স্টেশন মাস্টার, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম
“যেখানে যে লড়ে যায়, আমাদেরই লড়া”, শুনাইয়াছিলেন কবীর সুমন, তাঁহার গানে। তাঁহার আরও অনেক অবিস্মরণীয় পংক্তির মতোই, এই লাইনটিও আরও একবার স্মৃতিতে ফিরিয়া আসিল। ফিরাইয়া আনিল এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াও শিক্ষকতার চাকরি না-পাওয়া একঝাঁক তরুণ-তরুণীর লাগাতার অনশন-কর্মসূচি। চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, রাজ্যের অসংখ্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অজস্র পদ খালি থাকা সত্ত্বেও, কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁহাদিগের এখনও চাকরি জোটে নাই। উপরন্তু জনশ্রুতি, এ-রাজ্যে মোটা টাকার উৎকোচের ব্যবস্থা করিতে পারিলে, কিংবা বিশেষ রাজনৈতিক দলের তল্পিবাহক হইয়া উঠা গেলে, সহজেই শিক্ষকতার চাকরি জোটে, বস্তুত জুটিতেছেও। আর যথাবিধি পরীক্ষায় পাশ করিয়াও চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় ভুগিতে হইতেছে অধিকারী নিয়োগপ্রার্থীদিগকে। আপন অধিকার বুঝিয়া লইতে, অতএব, অনশনে বসিয়াছেন চাকরিপ্রার্থীরা। দীর্ঘ অনশনে তাঁহাদিগের অধিকাংশই অসুস্থ, কেহ কেহ মৃতপ্রায়। কিন্তু তাহাতে মনোবলে টান পড়ে নাই তাঁহাদিগের।
পক্ষান্তরে আমোদগেঁড়ে এই বঙ্গদেশে আমরা অধিকাংশই সম্বৎসর কোনও না কোনও উৎসবের মদে মাতিয়া থাকি… এবারেও তাহার অন্যথা ঘটে নাই। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন, চৈত্র সেল, আইপিএল, দেশজ চৌকিদারবর্গ কিংবা ভিনদেশ হইতে আগত দুই কেজি সোনার অর্থমূল্য ও অন্যান্য নানাবিধ বুলবুলভাজায় ব্যাপৃত আমাদিগের মনেও পড়ে নাই, আমারই নাগালের মধ্যে, খাস শহর কলকাতায়, উদাসীন, এমনকী উদ্ধত, কর্তৃপক্ষ তথা শাসকগোষ্ঠীর চক্ষে চক্ষু রাখিয়া দমবন্ধ এক পরীক্ষায় বসিয়াছেন আমাদেরই সমবয়সী কয়েকজন।
কেহ কেহ বলেন, অনশন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ভাবনার মূলে থাকে বিপরীত শিবিরের প্রতি এক গভীর বিশ্বাস ও সম্মানবোধ। আমি অনশন করি, কারণ আমি আপনার মনুষ্যত্ববোধের প্রতি বিশ্বাস রাখি; আমি অনশন করি, কেন না আমি মনে করি আমার যন্ত্রণা আপনার মনে অনুরূপ ভাব উদ্রেক করিতে সক্ষম। অনুকম্পা প্রার্থনা নহে, আমি আপনার মঙ্গলবোধে আস্থা রাখি। কর্তৃপক্ষ ভাবিয়া দেখিতে পারেন, তাঁহারা চাকরিপ্রার্থীদের এই মনোভঙ্গির যোগ্য কি না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় আরও কিছু থাকে বইকী। যেমন, এ-রাজ্যের মহামহিম মিডিয়াকুল, যাঁহারা সদাহাস্যবিনিন্দিত ডিএভিপি বিজ্ঞাপনের মোহে সাংবাদিকতার মূল্যবোধ ও দায়িত্ব বিসর্জনে কদাচ পিছপা নন, তাঁহারা, বাবু-কী-মনে-করিবেন ভাবিয়া অনশনের খবর নিত্য ব্ল্যাক আউট করিয়া চলেন, নিতান্ত উপায়ান্তর না-দেখিলে ভিতরের পাতায় কোনওমতে একটি সিঙ্গল কলম সন্তর্পণে গুঁজিয়া দিয়া দায় সারেন।
এমতাবস্থায়, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম সিদ্ধান্ত করিয়াছে এই অনশনের ঘটনাকে তাহার পূর্ণাঙ্গ পরিপ্রেক্ষিত ও সামগ্রিক ঘটমানতার নিরিখে তুলিয়া ধরিবার। পাঠক জ্ঞাত আছেন যে, ইতোমধ্যেই আমরা এই বিষয়ে একাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করিয়াছি। পাঠকবর্গকে আরও জানাই, ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করিয়া, আজ হইতে, প্রতিদিন এই বিষয়ে এক বা একাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হইয়াছে। আপনারা নিবন্ধগুলি পড়িবেন ও অন্যান্য পাঠকের সহিত ভাগ করিয়া লইবেন, ইহাই প্রত্যাশা।
ধন্যবাদসহ…
সূচি
বিশেষ নিবন্ধ
- এসএসসি আন্দোলন : অনিশ্চয়তায় স্কুল-শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা — রায়া দেবনাথ
- শেষ প্রশ্ন — কৌশিক দত্ত
দিনলিপি
- আঠাশ দিনের পাট — মিতুল দত্ত
- যে বাংলাকে চিনতাম তাকে চিনতে পারছি না — সৌমিত্র দস্তিদার
- স্বপ্নে শোনা একটা কথোপকথন — বিষাণ বসু
- লুপ চলছে বেদনাময় এক অপেক্ষার — অনিকেত চট্টোপাধ্যায়
- এসএসসি কর্মপ্রার্থীদের আন্দোলন কেন সমর্থন করি — সৈয়দ কওসর জামাল
- প্রতিপক্ষ কি শুধুই রাষ্ট্র? — সোহম দাস
- খিদে, তোমাকে : একটি খোলা চিঠি — অনির্বাণ ভট্টাচার্য
- এমনিতেও তো মরে যাব… চাকরি না পেলেও মরে যাব… — শতাব্দী দাশ
- ওঁরা চাকুরিপ্রার্থী, ভিক্ষুক নন — মন্দাক্রান্তা সেন
- এসএসসি অনশনমঞ্চ থেকে — কুশল সেন
ফটো স্টোরি
- রইল কিছু স্মৃতি আর সংগ্রামের দাগ — তন্ময় ভাদুড়ি